প্রকৃতির সান্নিধ্য আমাদের মানসিক ও আবেগিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। এটি আমাদের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল জীবনের এক চমৎকার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো নিশ্চিত করে যে প্রকৃতির সাথে অল্প সময়ের সংযোগও মানসিক চাপ কমাতে, মনোযোগ বাড়াতে এবং মেজাজ উন্নত করতে পারে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে উপকারী।
ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো-বোল্ডারের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা, যা ২০২৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা গেছে যে বাগান করার মতো কাজগুলি মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতার লক্ষণগুলিকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের দুটি দলে ভাগ করা হয়েছিল। একটি দলকে বাগান করার প্রশিক্ষণ, বীজ, চারাগাছ এবং একটি কমিউনিটি গার্ডেনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। অন্য দলকে দুই বছর ধরে বাগান করা থেকে বিরত রাখা হয়। ফলাফল ছিল চমকপ্রদ: বাগান করা দলগুলি শক্তিশালী সামাজিক সংযোগ, হ্রাসকৃত মানসিক চাপ এবং সপ্তাহে প্রায় ৪২ মিনিট বেশি শারীরিক কার্যকলাপের কথা জানিয়েছে। তারা প্রায় ৭% বেশি ফাইবার গ্রহণ করেছে, যা বিষণ্ণতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এই ফলাফলগুলি প্রমাণ করে যে কমিউনিটি গার্ডেনিং ক্যান্সার, দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অফ ইউটাহ-এর একজন নিউরোসায়েন্টিস্ট, ডঃ রাচেল হপম্যান, '২০-৫-৩ নিয়ম' প্রস্তাব করেছেন, যা মানসিক চাপ মোকাবিলা এবং সুস্থতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত প্রকৃতির সংস্পর্শে আসার পরামর্শ দেয়। এই নিয়ম অনুসারে, সপ্তাহে তিন দিন স্থানীয় সবুজ স্থানে ২০ মিনিট, মাসে পাঁচ ঘণ্টা আধা-বন্য পরিবেশে এবং বছরে তিন দিন বন্য পরিবেশে কাটানো উচিত। এই নিয়মটি প্রকৃতির উপকারিতা, যেমন স্নায়ুতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ, প্রদাহ হ্রাস, মেজাজ ও ঘুমের উন্নতি এবং বিপাক ক্রিয়ার উপর গবেষণার উপর ভিত্তি করে তৈরি।
প্রকৃতির পুনরুদ্ধারমূলক প্রভাবগুলি 'অ্যাটেনশন রেস্টোরেশন থিওরি' (Attention Restoration Theory) দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়। এই তত্ত্ব অনুসারে, প্রাকৃতিক পরিবেশ আমাদের মস্তিষ্কের উপর আলতোভাবে কাজ করে, যা মানসিক সম্পদকে পুনরায় পূরণ করতে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক আলো মেজাজকে স্থিতিশীল করে এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ করে ঘুমের মান উন্নত করে, যা উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার লক্ষণগুলি উপশম করতে পারে। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের গবেষণা অনুসারে, প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকা আমাদের মনকে শান্ত করে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চাপ থেকে মুক্তি দেয় এবং মনোযোগ ও একাগ্রতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
প্রকৃতির সাথে যুক্ত হওয়া শারীরিক কার্যকলাপকে উৎসাহিত করে, যা এন্ডোরফিন নিঃসরণ করে মেজাজ উন্নত করে এবং উত্তেজনা কমায়, ফলে মানসিক স্বচ্ছতা ও স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, প্রাকৃতিক পরিবেশগুলি প্রায়শই সামাজিক মেলামেশার স্থান হিসাবে কাজ করে, যা একাকীত্ব কমায় এবং কথোপকথন ও ভাগ করা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি করে। প্রকৃতিকে দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে তোলার জন্য বিশাল আয়োজনের প্রয়োজন নেই; ছোট, ধারাবাহিক পছন্দগুলি, যেমন সংক্ষিপ্ত হাঁটা বা গাছের পাশে বসা, প্রাকৃতিক বিশ্বের সাথে একটি শক্তিশালী সংযোগ তৈরি করতে পারে। এই অভ্যাসগুলি মানসিক স্বচ্ছতা এবং জীবনের সামগ্রিক মানের স্থায়ী উন্নতি ঘটাতে পারে, যা উদ্বেগ এবং মনোযোগের ক্লান্তি মোকাবেলার এক শক্তিশালী উপায়।