নতুন এক গবেষণা অনুসারে, আফ্রিকান সাভানা হাতিরা মানুষের সাথে যোগাযোগের সময় তাদের নির্দিষ্ট ইচ্ছা প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে। এই গবেষণাটি অ-প্রাইমেট স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে লক্ষ্য-ভিত্তিক অঙ্গভঙ্গি যোগাযোগের প্রথম প্রমাণ সরবরাহ করে, যা প্রাণীদের জ্ঞান এবং সামাজিক সংকেত সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়াকে আরও প্রসারিত করেছে। জিম্বাবুয়ের ১৭টি আধা-পোষা হাতির উপর এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে হাতিরা প্রায় ৩৮ ধরনের স্বতন্ত্র অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে, এবং এই অঙ্গভঙ্গিগুলো প্রায়শই তখনই দেখা যায় যখন একজন মানব পরীক্ষক তাদের দিকে মনোযোগ দেয়। এটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে হাতিরা তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য একজন মনোযোগী শ্রোতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন। যখন তাদের লক্ষ্য আংশিকভাবে পূরণ করা হত, তখন হাতিরা অঙ্গভঙ্গি চালিয়ে যেত। আর যখন তাদের প্রাথমিক অনুরোধগুলি পূরণ হত না, তখন তারা নতুন বা ভিন্ন অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে তাদের যোগাযোগকে আরও উন্নত করত। এই অধ্যবসায় এবং নতুনত্ব প্রাণীদের মধ্যে উচ্চ স্তরের জ্ঞানীয় পরিশীলিততা এবং উদ্দেশ্যমূলকতার ইঙ্গিত দেয়, যা পূর্বে কেবল প্রাইমেটদের মধ্যেই দেখা যেত বলে মনে করা হত।
এই আচরণগুলি প্রথম-স্তরের উদ্দেশ্যমূলকতার ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে একটি ব্যক্তি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্য ব্যক্তির আচরণকে প্রভাবিত করতে অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে। গবেষণার প্রধান লেখক ভেস্টা এলিউটারি জোর দিয়ে বলেছেন যে, লক্ষ্যগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে যোগাযোগের এই ক্ষমতাটি অন্যান্য প্রজাতির মধ্যে বিকশিত হয়েছে যাদের জটিল সামাজিক কাঠামো এবং উন্নত বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। এই গবেষণাটি হাতির যোগাযোগ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও গভীর করে এবং অ-প্রাইমেট প্রজাতিতে জটিল যোগাযোগের সীমা সম্পর্কে পূর্বের ধারণাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করে।
এটি ইঙ্গিত দেয় যে উন্নত জ্ঞানীয় যোগাযোগ দক্ষতাগুলি অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং সামাজিক প্রজাতিগুলিতে স্বাধীনভাবে বিকশিত হতে পারে, যা প্রাণীদের জ্ঞান এবং যোগাযোগের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করে। গবেষণাটি "Investigating intentionality in elephant gestural communication" শিরোনামে রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স জার্নালে জুলাই ২০২৫-এ প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় যে, হাতিরা তাদের চাহিদা বোঝাতে শুধু ডাক বা শব্দই ব্যবহার করে না, বরং সুনির্দিষ্ট অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেও তারা তাদের উদ্দেশ্য প্রকাশ করতে পারে। এটি প্রাণীদের মধ্যে যোগাযোগের জটিলতা এবং বুদ্ধিমত্তার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।