শারীরিক কার্যকলাপ কেবল শরীরকেই সুস্থ রাখে না, এটি আমাদের মস্তিষ্কের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। হতাশা বা ব্যর্থতার পর, ব্যায়াম মস্তিষ্ককে নতুন করে শুরু করতে সাহায্য করে, যা নতুন নিউরনের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা বাড়ায়। মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক অস্কার এলিয়া জুডাইরে-এর মতে, জীবনের কোনো কঠিন সময়ে শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্ককে 'রিসেট' করার সুযোগ করে দেয়।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত শরীরচর্চা মস্তিষ্কে নিউরোজেনেসিস প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে, অর্থাৎ নতুন নিউরন তৈরি হয়। স্নায়ুবিজ্ঞানী দিয়েগো এমিলিয়া রেডোলার ব্যাখ্যা অনুসারে, শক্তি প্রশিক্ষণ, কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম বা সাধারণ হাঁটাচলা—সবই মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসে জিন এক্সপ্রেশন বাড়িয়ে তোলে। এই হিপ্পোক্যাম্পাস অঞ্চলটি স্মৃতিশক্তি এবং শেখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, এটি BDNF (Brain-Derived Neurotrophic Factor) নামক একটি জিনের কার্যকারিতা বাড়ায়, যা নিউরনের বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
নিউরোজেনেসিস ছাড়াও, ব্যায়াম হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ বাড়ায় এবং এর সামগ্রিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এই সম্মিলিত সুবিধাগুলি স্মৃতিশক্তিকে আরও শক্তিশালী করে এবং আবেগ ও মানসিক চাপ মোকাবিলার ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (prefrontal cortex) অঞ্চলের উদ্দীপনা বাড়িয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সমস্যা সমাধানের মতো জ্ঞানীয় ক্ষমতাকেও উন্নত করে।
গুরুত্বপূর্ণ মিটিং বা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার আগে, শারীরিক ব্যায়াম জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতা বাড়ানোর একটি কার্যকর কৌশল হতে পারে। খাবারের উপর নির্ভরতা বা নিছক আলাপের মাধ্যমে সাময়িক স্বস্তি খোঁজার পরিবর্তে, শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘস্থায়ী উপকারিতা প্রদান করে। এটি আমাদের হতাশা কাটিয়ে উঠতে এবং সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।