অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কীভাবে টেকসই হয় এবং সমাজকে স্থবিরতা থেকে বের করে আনে, সেই মৌলিক প্রক্রিয়াগুলি ব্যাখ্যা করার জন্য রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস (Royal Swedish Academy of Sciences) গত অক্টোবর মাসের ১৩ তারিখে ২০২৫ সালের অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে নোবেল মেমোরিয়াল পুরস্কার ঘোষণা করেছে। এই সম্মাননা তিনজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ—জোয়েল মোকির (Joel Mokyr), ফিলিপ অ্যাগিয়ন (Philippe Aghion), এবং পিটার হাউইটকে (Peter Howitt)—তাদের সম্মিলিত কাজের জন্য প্রদান করা হয়। তাদের গবেষণা দেখিয়েছে যে প্রযুক্তির অগ্রগতি কীভাবে দীর্ঘস্থায়ী সমৃদ্ধির যুগে প্রবেশে সহায়তা করে এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতার চক্র ভেঙে দেয়।
পুরস্কারের অর্ধেক অংশ পেয়েছেন ডাচ-বংশোদ্ভূত আমেরিকান-ইসরায়েলি অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ জোয়েল মোকির, যিনি নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির (Northwestern University) সঙ্গে যুক্ত। তার ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ প্রমাণ করেছে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একটি স্ব-উৎপাদনশীল প্রক্রিয়া হিসেবে চলতে গেলে কিছু অপরিহার্য সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক পূর্বশর্ত প্রয়োজন। মোকির দেখিয়েছেন যে ক্রমাগত প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য এমন একটি সামাজিক কাঠামো দরকার যেখানে কৌতূহল, বৈজ্ঞানিক উপলব্ধি এবং নতুন ধারণার প্রতি উন্মুক্ততাকে সক্রিয়ভাবে মূল্য দেওয়া হয়। তিনি এই সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকে শিল্প বিপ্লব (Industrial Revolution) থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের ধারাবাহিকতার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।
পুরস্কারের বাকি অংশ যৌথভাবে পেয়েছেন কঁলেজ দ্য ফ্রঁস (Collège de France) এবং লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সের (London School of Economics) ফিলিপ অ্যাগিয়ন এবং ব্রাউন ইউনিভার্সিটির (Brown University) পিটার হাউইট। এই দুই অর্থনীতিবিদ 'সৃজনশীল ধ্বংস' (creative destruction) ধারণাটিকে একটি সুনির্দিষ্ট গাণিতিক অর্থনৈতিক মডেলে রূপ দিয়েছেন। তারা ১৯৯২ সালের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধের ওপর ভিত্তি করে এই মডেলটি তৈরি করেন।
তাদের তত্ত্ব অনুসারে, অর্থনৈতিক অগ্রগতি সহজাতভাবেই চক্রাকার: যখন উন্নত নতুন প্রযুক্তি এবং ব্যবসায়িক মডেলগুলির উদ্ভব হয়, তখন অনিবার্যভাবে পুরানো প্রযুক্তিগুলি স্থানচ্যুত হয় এবং অপ্রচলিত হয়ে পড়ে। এই সৃজনশীল ধ্বংস প্রক্রিয়াটি যদিও প্রতিষ্ঠিত সংস্থা এবং কর্মসংস্থানকে ব্যাহত করে ও স্থানচ্যুতি ঘটায়, তবুও এটি সামগ্রিক সামাজিক উন্নতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক।
কমিটি জোর দিয়ে বলেছে যে এই গতিশীলতার অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়াগুলিকে সক্রিয়ভাবে বজায় রাখা অপরিহার্য, অন্যথায় অর্থনীতি স্থবিরতায় ফিরে যেতে পারে। লাউরেটদের এই গবেষণা দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে স্থবিরতা থেকে সমৃদ্ধির পথে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে আলোকিত করেছে। তাদের কাজ স্পষ্ট করে যে অগ্রগতি কেবল সৃষ্টির পথ ধরে আসে না, বরং প্রয়োজনীয় ভাঙন বা অপসারণের মধ্য দিয়েও আসে, যা অর্থনৈতিক বিবর্তনকে বোঝার জন্য একটি ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।