দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি: শুল্ক হ্রাসের পথে নতুন দিগন্ত

সম্পাদনা করেছেন: gaya ❤️ one

দক্ষিণ কোরিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনায় এক ইতিবাচক বাতাসের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে দুই দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যখন ওয়াশিংটন সফর করছেন, তখন সিউলের পক্ষ থেকে আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এই অগ্রগতি মূলত জুলাই মাসের শেষের দিকে স্বাক্ষরিত একটি দ্বিপাক্ষিক কাঠামোগত চুক্তির বিস্তারিত বাস্তবায়নের ওপর আলোকপাত করছে, যার মূল বিষয় হলো দক্ষিণ কোরিয়ার বিশাল বিনিয়োগের বিনিময়ে মার্কিন শুল্ক হ্রাস।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিদল, যার মধ্যে অর্থমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী কু ইউন-চোল, রাষ্ট্রপতি নীতি প্রধান কিম ইয়ং-বম এবং শিল্পমন্ত্রী কিম জং-কোয়ান রয়েছেন, তারা ওয়াশিংটনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করছেন। এই বৈঠকগুলোর লক্ষ্য হলো শুল্ক ছাড়ের শর্ত হিসেবে সিউলের প্রতিশ্রুত ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্যাকেজ কীভাবে কার্যকর করা হবে, সেই সংক্রান্ত মতপার্থক্য দূর করা। জানা গেছে, দুই পক্ষই এখন কারিগরি দিকগুলোর ওপর মনোযোগ দিচ্ছে, কারণ বৈদেশিক মুদ্রার নিরাপত্তা ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে মতভেদ অনেকটাই কমে এসেছে। অর্থমন্ত্রী কু ইউন-চোল জি২০ এবং আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক বার্ষিক সভায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টের সাথে একাধিক বৈঠকের সুযোগ খুঁজছেন।

এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কোরিয়ার বিনিয়োগের কাঠামো। সিউল মূলত ঋণ এবং ক্রেডিট গ্যারান্টির মাধ্যমে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা এড়াতে সহায়ক হবে। অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি নগদ অর্থ বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন, যা সিউল প্রত্যাখ্যান করেছে, কারণ এতে ১৯৯৭ সালের এশীয় আর্থিক সংকটের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তবে, নীতিগত স্তরে সমঝোতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে; রাষ্ট্রপতি নীতি প্রধান কিম ইয়ং-বম উল্লেখ করেছেন যে মার্কিন পক্ষ কোরিয়ার সংশোধিত প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে এবং নতুন বিকল্পও উপস্থাপন করেছে।

এই অগ্রগতি এমন এক সময়ে এলো যখন উভয় দেশ অক্টোবরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এপিইসি) শীর্ষ সম্মেলনের আগে একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য মরিয়া। এই সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি লি জে-মিয়ং এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাক্ষাৎ করার সম্ভাবনা রয়েছে, যা চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য একটি উপযুক্ত মঞ্চ হতে পারে। উল্লেখ্য, জুলাই মাসের কাঠামো চুক্তির অংশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোরিয়ান গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক কমাতে সম্মত হয়েছিল। এই সময়ে, কোরিয়ার বেঞ্চমার্ক KOSPI স্টক সূচক রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা বাজারের আশাবাদকে প্রতিফলিত করে। এই বাণিজ্য সম্পর্ক কেবল আর্থিক লেনদেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া একটি নির্ভরযোগ্য মিত্র, এবং এই চুক্তি দুই দেশের কৌশলগত সমন্বয়কে আরও দৃঢ় করবে। আলোচনার এই পর্যায়টি ইঙ্গিত দেয় যে, মতবিরোধের মেঘ সরে গিয়ে সহযোগিতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে, যেখানে উভয় পক্ষই নিজেদের স্বার্থ বজায় রেখে সম্মিলিত সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হতে চাইছে। এই প্রক্রিয়ায়, প্রতিটি মতভেদকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত—যা আরও গভীর বোঝাপড়া এবং শক্তিশালী অংশীদারিত্বের ভিত্তি স্থাপন করে।

উৎসসমূহ

  • Anadolu Ajansı

  • Yonhap News Agency

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।