২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা গ্যাজপ্রম এবং চীনের রাষ্ট্রীয় পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (সিএনপিসি) 'পাওয়ার অফ সাইবেরিয়া ২' গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, রাশিয়া মঙ্গোলিয়ার মধ্য দিয়ে প্রায় ৩০ বছর ধরে বছরে ৫০ বিলিয়ন ঘনমিটার (বিসিএম) প্রাকৃতিক গ্যাস চীনের ইয়ামাল ক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করবে। এই পদক্ষেপটি রাশিয়ার জন্য একটি কৌশলগত পরিবর্তন নির্দেশ করে, কারণ দেশটি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে ইউরোপীয় বাজার হারিয়েছে এবং এশিয়ার দিকে তার জ্বালানি রপ্তানি পুনর্নির্দেশ করতে চাইছে।
গ্যাজপ্রমের সিইও আলেক্সেই মিলার এই প্রকল্পটিকে "বিশ্বের বৃহত্তম, সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী এবং মূলধন-নিবিড় গ্যাস প্রকল্প" হিসেবে অভিহিত করেছেন। বিদ্যমান 'পাওয়ার অফ সাইবেরিয়া' পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বছরে ৩৮ বিলিয়ন ঘনমিটার থেকে ৪৪ বিলিয়ন ঘনমিটারে বৃদ্ধি পাবে এবং দূর প্রাচ্য ও সাখালিন দ্বীপের মাধ্যমে সরবরাহ ১০ বিলিয়ন ঘনমিটার থেকে ১২ বিলিয়ন ঘনমিটারে উন্নীত হবে। এই বর্ধিত সরবরাহ রাশিয়া ও চীনের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা আরও জোরদার করবে।
ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপীয় বাজারে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, এশিয়ার দিকে, বিশেষ করে চীনের দিকে মনোনিবেশ করা রাশিয়ার অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জ্বালানি রপ্তানি রাশিয়ার ফেডারেল বাজেটের প্রায় ৪০%। তাই চীনের সাথে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি রাশিয়ার আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। ২০২৩ সালে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা তাদের ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বের প্রতিফলন। এই নতুন গ্যাস চুক্তিটি বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তিতে চীনের যথেষ্ট দর কষাকষির ক্ষমতা রয়েছে, কারণ রাশিয়া চীনের উপর বেশি নির্ভরশীল। চীন তার জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে। এই চুক্তিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর চাপ সৃষ্টি করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবেও দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে যখন চীন সম্প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখেও রাশিয়ার আর্কটিক এলএনজি ২ প্রকল্প থেকে প্রথম এলএনজি চালান গ্রহণ করেছে। এই ঘটনাটি পশ্চিমা চাপ উপেক্ষা করে বেইজিংয়ের দৃঢ় অবস্থানকে তুলে ধরে।
যদিও এই সমঝোতা স্মারকটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে পাইপলাইনের মূল্য নির্ধারণ, অর্থায়ন এবং নির্মাণ শুরুর নির্দিষ্ট সময়সীমা নিয়ে আলোচনা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে, এটি নিশ্চিত যে এই চুক্তির অধীনে লেনদেন রাশিয়ান রুবল এবং চীনা ইউয়ানে হবে, যা মার্কিন ডলারের উপর নির্ভরতা কমাবে। গ্যাজপ্রম সিইও জানিয়েছেন যে চীনের জন্য গ্যাসের দাম ইউরোপের তুলনায় কম হবে, যা মূলত দীর্ঘ পরিবহন দূরত্বের কারণে। এই চুক্তিটি বৈশ্বিক জ্বালানি ভূ-রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যা রাশিয়া ও চীনের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ককে আরও গভীর করবে।