পোল্যান্ড সরকার বেলারুশের সাথে তাদের সীমান্ত ক্রসিংগুলি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে চীন ও ইউরোপের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রেলপথে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগ থেকে নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে বেলারুশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে রাশিয়া ও বেলারুশের যৌথ সামরিক মহড়া 'জাপাদ-২০২৫' এবং পোল্যান্ডের আকাশসীমায় রাশিয়ান ড্রোনের অনুপ্রবেশের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। এই সীমান্ত বন্ধের ফলে চীন-ইউরোপ রেলওয়ে এক্সপ্রেস, যা চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৯০% রেল মালবাহী পরিবহন করে, তাতে উল্লেখযোগ্য বিঘ্ন ঘটেছে।
পোল্যান্ডের এই পদক্ষেপের ফলে লজিস্টিক কোম্পানিগুলোকে বিকল্প রুটের সন্ধান করতে হচ্ছে, যা খরচ বৃদ্ধি এবং সরবরাহের সময় দীর্ঘায়িত করছে। কিছু চালান কাজাখস্তান, কাস্পিয়ান সাগর, কৃষ্ণ সাগর এবং তুরস্কের মধ্য দিয়ে বা দক্ষিণ ইউরোপের রুটে পাঠানো হচ্ছে। এই করিডোরটি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি ইউরোপে প্রবেশের অন্যতম প্রধান পথ। ২০২৪ সালে এই রুটে পণ্যের পরিমাণ ১০.৬% বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং চালানের মূল্য ৮৫% বেড়ে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আকস্মিক সীমান্ত বন্ধের ফলে লজিস্টিকসে ব্যাঘাত ঘটেছে এবং পোল্যান্ড তার প্রধান ট্রানজিট হাবের অবস্থান হারাতে পারে যদি এই অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হয়। পোল্যান্ডের রেল অপারেটর, যেমন পিকেপি কার্গো, সতর্ক করেছে যে দীর্ঘমেয়াদী বন্ধের ফলে সামুদ্রিক শিপিং বা দক্ষিণ স্থল রুটের মাধ্যমে ব্যয়বহুল পুনঃনির্দেশনার প্রয়োজন হবে। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম যেমন টেমু এবং শেইন এই পরিস্থিতির দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হচ্ছে, কারণ তারা স্থল রুটের গতির উপর নির্ভরশীল।
এই বিষয়ে, ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ওয়ারশতে পোল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লাভ সিকরস্কির সাথে সাক্ষাৎ করেন। যদিও আলোচনা হয়েছে, পোল্যান্ড তার অবস্থানে অটল রয়েছে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে। ইউরোপীয় কমিশন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এই সিদ্ধান্তের পেছনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণ থাকায় পোল্যান্ডের পদক্ষেপের সমালোচনা থেকে বিরত রয়েছে। এই ঘটনাটি জাতীয় নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরেছে, যেখানে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগগুলি বাণিজ্য প্রবাহের উপর প্রভাব ফেলছে।