১ জানুয়ারী, ২০২৬ থেকে বুলগেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোকে তার রাষ্ট্রীয় মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করতে চলেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে দেশটির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংহতির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৮ জুলাই, ২০২৫-এর অনুমোদন এবং সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, বুলগেরিয়া ইউরো অঞ্চলের ২১তম সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে প্রস্তুত। বুলগেরিয়া সরকার ইউরো গ্রহণের প্রস্তুতিকে সুসংহত করতে একটি বিশেষ সমন্বয় পরিষদ গঠন করেছে। এই পরিষদটি রূপান্তরের সকল ব্যবহারিক দিকগুলির আয়োজন ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছে।
জুলাই ২০২৫-এ, আইন সংশোধনের মাধ্যমে অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ভোক্তা সুরক্ষা কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই আইনগত পরিবর্তনগুলি নিশ্চিত করবে যে রূপান্তর প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ এবং জনবান্ধব হয়। নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষায়, বুলগেরিয়া সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে। খাদ্য, জ্বালানি, ঔষধ এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রতিযোগিতা সুরক্ষা কমিশন ও ভোক্তা সুরক্ষা কমিশন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ১৫০টিরও বেশি খুচরা বিক্রেতার উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং অন্যায়ভাবে দাম বাড়ানোর প্রবণতা রোধে পরিদর্শন বৃদ্ধি করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, ইউরো চালু হওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত) দাম উভয় মুদ্রায় (লেভ ও ইউরো) প্রদর্শিত হবে, যা নাগরিকদের নতুন মুদ্রার সাথে পরিচিত হতে এবং সম্ভাব্য প্রতারণা এড়াতে সহায়তা করবে। দেশব্যাপী একটি ব্যাপক তথ্য প্রচার অভিযান শুরু হয়েছে, যা ১৬৫টি পৌরসভা কেন্দ্রে পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রচারণার মূল লক্ষ্য হলো ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা এবং সাধারণ নাগরিকদের ইউরো গ্রহণের সুবিধা, প্রক্রিয়া এবং এর প্রভাব সম্পর্কে অবহিত করা। ১০ মিলিয়ন লেভ বাজেটে পরিচালিত এই উদ্যোগের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি এবং স্বচ্ছ যোগাযোগ স্থাপন করা হচ্ছে।
বুলগেরিয়ার মুদ্রা লেভ ১৯৯৯ সাল থেকে ইউরোর সাথে একটি মুদ্রা বোর্ডের মাধ্যমে স্থির বিনিময় হারে (১ ইউরো = ১.৯৫৫৪৩ BGN) সংযুক্ত রয়েছে। এই স্থিতিশীলতা ইউরো গ্রহণের সময় বিনিময় হারের বড় ধরনের ওঠানামা রোধ করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউরো গ্রহণ বাণিজ্য বৃদ্ধি, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং ইউরোপীয় অর্থনীতির সাথে আরও গভীর একীকরণের সুযোগ তৈরি করবে। যদিও কিছু নাগরিকের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, তবে সরকারের গৃহীত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং পূর্বের মুদ্রার স্থিতিশীলতা এই রূপান্তরকে মসৃণ করতে সহায়ক হবে। বুলগেরিয়ার ইউরো গ্রহণ কেবল একটি মুদ্রা পরিবর্তন নয়, বরং এটি ইউরোপীয় পরিবারের সাথে দেশটির আরও দৃঢ় বন্ধনের প্রতীক। এই রূপান্তর প্রক্রিয়াটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে একটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।