বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন তার অভিবাসন নীতির আওতায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার ফলে রাশিয়ান আশ্রয়প্রার্থীদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। সম্প্রতি অন্তত দুটি ফ্লাইটে রাশিয়ান ভিন্নমতাবলম্বীদের মস্কোতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা এই ব্যক্তিরা দেশে ফিরে গেলে ক্রেমলিনের প্রতিশোধের শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন। মানবাধিকার কর্মীরা এই নির্বাসন নীতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। রাশিয়ান মানবাধিকার কর্মী ভ্লাদিমির ওসেচকিন এই পদক্ষেপকে "নিষ্ঠুর এবং ঘৃণ্য" বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সতর্ক করেছেন যে রাশিয়ার প্রচারণা এই নির্বাসনকে ব্যবহার করে পশ্চিমের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে পারে এবং অন্যান্য ভিন্নমতাবলম্বীদের আশ্রয় চাইতে নিরুৎসাহিত করতে পারে।
এর সমান্তরালে, ট্রাম্প প্রশাসন "অপারেশন মিডওয়ে প্লাইট" নামে একটি অভিবাসন প্রয়োগ অভিযান শুরু করেছে, যা শিকাগো এবং ইলিনয়ের অন্যান্য অংশে কেন্দ্রীভূত। এই অভিযানটি রাজ্যের "অভয়ারণ্য" নীতিগুলির প্রতিক্রিয়া হিসাবে শুরু হয়েছে, যা ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সাথে রাজ্যের সহযোগিতার সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন প্রয়োগ নীতিকে সমর্থন করেছে, যা ফেডারেল এজেন্টদের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় অভিযান পুনরায় শুরু করার অনুমতি দিয়েছে। এই অভিযানগুলি জাতি, ভাষা বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করছে বলে জানা গেছে। উদারপন্থী বিচারপতি এবং ক্যালিফোর্নিয়ার কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন, তাদের মতে এটি জাতিগত প্রোফাইলিংকে উৎসাহিত করে এবং সাংবিধানিক সুরক্ষাকে লঙ্ঘন করে।
এই ঘটনাগুলি বর্তমান প্রশাসনের অধীনে অভিবাসন প্রয়োগের একটি বৃহত্তর প্রবণতা নির্দেশ করে, যা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে উল্লেখযোগ্য সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। অতিরিক্ত তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় যে, জুন এবং আগস্ট মাসে প্রায় ৮০ জন রাশিয়ান আশ্রয়প্রার্থীকে শিকল ও হাতকড়া পরিয়ে মিশরের মাধ্যমে মস্কোতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। সেখানে তাদের মিশরীয় এবং রুশ কর্তৃপক্ষের সহায়তায় মার্কিন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এর ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়, যারা তাদের সরাসরি রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি)-এর হাতে তুলে দেয়। এদের মধ্যে আন্দ্রেই ভোভচেঙ্কো নামে একজন প্রাক্তন রুশ সৈনিক ছিলেন, যিনি ২০২২ সালের অক্টোবরে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরে যুদ্ধক্ষেত্রে যোগ না দিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন। তাকে মস্কোতে ফেরত পাঠানোর পর গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১০ বছরের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হয়।
রাশিয়ার মানবাধিকার কর্মী ভ্লাদিমির ওসেচকিন মন্তব্য করেছেন, "সুরক্ষা প্রয়োজন এমন ব্যক্তিরা, যারা পুতিনের যুদ্ধ এবং স্বৈরাচার, এফএসবি নির্যাতন এবং দমন-পীড়ন থেকে পালিয়ে এসেছেন, তারা মার্কিন কারাগারে শেষ হয়েছে, কমলা রঙের জামা পরে এবং অপরাধীদের মতো স্থানান্তরকালে হাতকড়া পরে।" তিনি আরও বলেন, "কিছুজনকে এফএসবি এবং অন্যান্য নিরাপত্তা পরিষেবার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এটি নিষ্ঠুর এবং লজ্জাজনক।" বর্তমানে, প্রায় এক হাজার রুশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনা করছে। তাদের ভাগ্যের প্রতি মার্কিন সরকারের উদাসীনতা বিবেচনা করে, নির্বাসনের আদেশের সম্মুখীন হওয়া রাশিয়ানদের কানাডিয়ান সরকারের আশ্রয় দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে, বিশেষ করে যারা যুদ্ধবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত। অন্যথায়, তাদের সতর্ক করা হয়েছে, ট্রাম্পের নির্বাসন নীতি "অনেক সৎ ও নিরীহ মানুষের জীবন ধ্বংস করার হুমকি দেয়।"