যুক্তরাষ্ট্র সরকার সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ১ অক্টোবর বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এর মূল কারণ হলো স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় এবং বাজেট সংক্রান্ত বিষয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যে চলমান মতবিরোধ। ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস একটি স্বল্পমেয়াদী "কন্টিনিউইং রেজোলিউশন" পাশ করেছে, যা আগামী ২১শে নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে বর্তমান ব্যয় অনুযায়ী অর্থায়ন করবে। এই সাত সপ্তাহের মধ্যে আইনপ্রণেতারা বার্ষিক ব্যয় সংক্রান্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। তবে, ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন ছাড়া একটি অস্থায়ী আর্থিক বিল পাসের জন্য ৬০টি ভোটের প্রয়োজন, যেখানে রিপাবলিকানরা সেনেটে ৫৩-৪৭ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আছে। যদি ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো চুক্তি না হয়, তাহলে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ১ অক্টোবর থেকে কাজ বন্ধ করে দেবে।
রিপাবলিকানরা সরকারের কার্যক্রম চালু রাখতে একটি "ক্লিন বিল" পাশ করতে চায় এবং তারা মনে করে যে এই অচলাবস্থার জন্য ডেমোক্র্যাটরাই দায়ী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, "তারা সরকার বন্ধ করছে। আমরা সরকার বন্ধ করছি না। আমরা সরকার বন্ধ করতে চাই না কারণ আমরা সেরা সময়ে রয়েছি।" অন্যদিকে, কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা সম্প্রসারণ এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির পরিবর্তনগুলো বাতিলের জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। এই পরিবর্তনগুলো জুলাই মাসে রিপাবলিকানদের পাশ করা কর ও ব্যয় বিলের পরে কার্যকর হয়েছিল। হাউস মাইনরিটি লিডার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ডেমোক্র্যাটরা এমন কোনো ব্যয় বিলে সমর্থন দেবে না যা "সাধারণ আমেরিকানদের স্বাস্থ্যসেবা কমিয়ে দেয়"। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের (CBO) অনুমান অনুযায়ী, যদি অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (ACA) এর অধীনে ভর্তুকি বাড়ানো না হয়, তাহলে ২০২৬ সালে ২.২ মিলিয়ন এবং পরের বছর ৩.৭ মিলিয়ন মানুষ স্বাস্থ্য বীমা হারাবে।
সরকার বন্ধ হয়ে গেলে, ফেডারেল সংস্থাগুলোকে "অ-অত্যাবশ্যকীয়" কর্মীদের বেতন ছাড়া ছুটিতে পাঠাতে বাধ্য করা হবে। তবে, "অত্যাবশ্যকীয়" কর্মীরা, যাদেরকে অপরিহার্য বলে মনে করা হয়, তারা কাজ চালিয়ে যাবেন। এর মধ্যে এফবিআই এজেন্ট, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক, সক্রিয় সামরিক কর্মী এবং টিএসএ নিরাপত্তা কর্মীরা অন্তর্ভুক্ত। যদিও তারা কাজ চালিয়ে যাবেন, তবে তাদের বেতন কেবল সরকার বন্ধ হওয়া শেষ হওয়ার পরেই দেওয়া হবে। ঐতিহাসিকভাবে, ১৯৯৫-৯৬ সালে বিল ক্লিনটন প্রশাসনের সময় একটি ২১ দিনের সরকারি বন্ধ হয়েছিল। ২০১৩ সালে, অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (ACA) নিয়ে মতবিরোধের কারণে ১৬ দিনের জন্য সরকার বন্ধ ছিল। এবং ২০১৮-১৯ সালে, সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণের অর্থায়ন নিয়ে বিরোধের জেরে ৩৫ দিনের জন্য সরকার বন্ধ ছিল, যা আধুনিক মার্কিন ইতিহাসে দীর্ঘতম সরকারি বন্ধ। ১৯৮০ সাল থেকে মোট প্রায় ১৪টি শাটডাউন হয়েছে।
এই অচলাবস্থার মূল কারণ হলো স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় নিয়ে দুই দলের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। ডেমোক্র্যাটরা স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা, বিশেষ করে মেডিকেইড এবং অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (ACA) এর অধীনে প্রদত্ত ভর্তুকি সম্প্রসারণের উপর জোর দিচ্ছে। তারা জুলাই মাসে রিপাবলিকানদের পাশ করা কর ও ব্যয় বিলের মাধ্যমে মেডিকেইডে যে $১ ট্রিলিয়ন কাটছাঁট করা হয়েছে, তা বাতিলের দাবিও জানাচ্ছে। অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা একটি "ক্লিন বিল" পাশ করতে চায় যা বর্তমান ব্যয় স্তর বজায় রাখবে এবং স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত বিষয়গুলো পরে আলোচনার জন্য আলাদা রাখতে চায়।
এই অচলাবস্থা ফেডারেল কর্মীদের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। অতীতে, সরকার বন্ধের সময় ফেডারেল সরকারের প্রায় ২.২ মিলিয়ন বেসামরিক কর্মচারীর মধ্যে লক্ষ লক্ষ ফেডারেল কর্মী বেতন ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন বা ছুটিতে গেছেন। যদিও ২০১৯ সালের একটি আইন অনুযায়ী, এই কর্মীরা সরকার পুনরায় চালু হওয়ার পর তাদের বকেয়া বেতন ফেরত পান, তবুও এই সময়কালে তারা তাৎক্ষণিক আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হন। কিছু ক্ষেত্রে, যেমন ২০১৮-১৯ সালের বন্ধের সময়, প্রায় ৮০০,০০০ ফেডারেল কর্মীর মধ্যে প্রায় ৩৪০,০০০ জনকে ছুটি দেওয়া হয়েছিল। এই বারের বন্ধের ক্ষেত্রে, হোয়াইট হাউস থেকে ফেডারেল কর্মীদের ছাঁটাই করার হুমকি দেওয়া হয়েছে, যা পূর্বের বন্ধের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে।
স্বাস্থ্যসেবা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ। ২০২২ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার জিডিপির ১৬.৬% স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করেছে, যা অন্য যেকোনো উন্নত দেশের চেয়ে বেশি। এই বিশাল ব্যয় সত্ত্বেও, লক্ষ লক্ষ আমেরিকান স্বাস্থ্যসেবার নাগালের বাইরে রয়েছে, যা এই বিতর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। এই অচলাবস্থা কেবল সরকারি কার্যক্রমকেই ব্যাহত করবে না, বরং এটি লক্ষ লক্ষ আমেরিকানদের স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার উপরও প্রভাব ফেলবে।