২০২৫ সালের ৯ই অক্টোবর, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ২০০৯ সালে প্রদান করা নোবেল শান্তি পুরস্কারের সিদ্ধান্তের ওপর তীব্র সমালোচনা করেন। ট্রাম্প দৃঢ়তার সাথে বলেন যে এই সম্মাননা এমন একজনকে দেওয়া হয়েছিল যিনি কেবল "এই দেশকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কিছুই করেননি" এবং ওবামার শাসনকালকে "একজন খারাপ রাষ্ট্রপতি"-র সময়কাল হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি তুলনামূলক মন্তব্য করে আরও বলেন, "সবচেয়ে খারাপ ছিলেন স্লিপি জো বাইডেন, তবে ওবামাও খারাপ ছিলেন।" এই মন্তব্যগুলি রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে অতীত নেতৃত্বের মূল্যায়ন এবং বর্তমান প্রত্যাশা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উঠে আসছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নিজের প্রশাসনের বৈদেশিক নীতির সাফল্য তুলে ধরে দাবি করেন যে তার নেতৃত্বে "নয় মাসে আটটি যুদ্ধের সমাপ্তি" ঘটেছে। তিনি যে নির্দিষ্ট যুদ্ধগুলির কথা উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েল-ইরান, ভারত-পাকিস্তান, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া, মিশর-ইথিওপিয়া, রুয়ান্ডা-গণতান্ত্রিক কঙ্গো এবং সার্বিয়া-কসোভোর সংঘাত। মার্কিন গণমাধ্যমগুলি অবশ্য আলোকপাত করেছে যে ট্রাম্পের উল্লিখিত যুদ্ধগুলির সুস্পষ্ট তালিকা বা নথি সহজে পাওয়া যাচ্ছে না এবং কিছু ক্ষেত্রে এই সংঘাতগুলিতে আমেরিকার জড়িত থাকার বিস্তারিত তথ্য ভালোভাবে নথিভুক্ত নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্প কিছু ক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করলেও, কিছু সংঘাত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ ছিল না এবং অনেক ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদী শান্তির নিশ্চয়তা নেই।
অন্যদিকে, বারাক ওবামাকে ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং জনগণের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার "অসাধারণ প্রচেষ্টার" জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিল। সেই সময় কমিটি ওবামার পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে "নতুন জলবায়ু" সৃষ্টির ওপর জোর দিয়েছিল। ওবামা নিজে পুরস্কার গ্রহণের সময় বলেছিলেন যে তিনি এমন একটি জাতির কমান্ডার-ইন-চিফ যিনি দুটি যুদ্ধের মাঝে রয়েছেন।
ট্রাম্পের এই ধরনের মন্তব্যগুলি এমন এক সময়ে এসেছে যখন চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের ঘোষণাটি পরের দিন, অর্থাৎ ১০ই অক্টোবর, ২০২৫-এর জন্য নির্ধারিত রয়েছে। ট্রাম্পের নিজের 'যুদ্ধ সমাপ্তি'র দাবি আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিলেও, ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের ক্ষেত্রে ১২ দিনের যুদ্ধের পর একটি যুদ্ধবিরতি হয়েছিল যেখানে ট্রাম্পের ভূমিকা ছিল বলে দাবি করা হয়। তবে, এই ধরনের পদক্ষেপগুলি স্বল্পমেয়াদী স্থিতিশীলতা আনলেও, সংঘাতের মূল কারণগুলির সমাধান হয়েছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এই সমস্ত ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত দেয় যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বিভিন্ন নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি এবং গৃহীত পদক্ষেপের প্রভাবকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা হচ্ছে।