ইউরোপের সম্মিলিত নিরাপত্তার প্রশ্নে ন্যাটো জোটের অভ্যন্তরে আর্থিক দায়বদ্ধতা নিয়ে চলমান টানাপোড়েন নতুন মাত্রা পেয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবের সাথে হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে স্পেনের প্রতিরক্ষা ব্যয় নিয়ে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, স্পেন যদি তার প্রতিরক্ষা ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে না বাড়ায়, তবে জোট থেকে তাকে বহিষ্কার করা হতে পারে। এই বক্তব্যটি এসেছে জুন ২০২৫ সালে দ্য হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে। সেখানে জোটের ৩২টি সদস্য রাষ্ট্র জিডিপির ২ শতাংশ থেকে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়িয়ে ৫ শতাংশে উন্নীত করার বিষয়ে সম্মত হয়েছিল বলে ট্রাম্প দাবি করেন।
এই নতুন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ক্ষেত্রে স্পেনকে 'বিলম্বকারী' হিসেবে চিহ্নিত করে ট্রাম্প বলেন, তাদের এই ব্যর্থতার কোনো অজুহাত থাকতে পারে না। উল্লেখ্য, ন্যাটো জোট তার সম্মিলিত প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করার চেষ্টা করছে, যেখানে ২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকে নিরাপত্তা উদ্বেগ বেড়েছে। ন্যাটো নেতারা ২০৩৫ সালের মধ্যে বার্ষিক জিডিপির ৫ শতাংশ মূল প্রতিরক্ষা চাহিদা এবং প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট খাতে বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছেন।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ অবশ্য দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন যে, স্পেনের বর্তমান প্রতিরক্ষা বাজেট দেশের কল্যাণ রাষ্ট্র ব্যবস্থার সঙ্গে 'পর্যাপ্ত, বাস্তবসম্মত এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ'। স্পেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্গারিটা রোবলস পূর্বে ৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রাকে 'সম্পূর্ণ অসম্ভব' বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। যদিও স্পেন পূর্বে ২০২৯ সালের মধ্যে ২ শতাংশে পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এপ্রিল মাসে সানচেজ ঘোষণা করেন যে, তারা একটি 'শিল্প ও প্রযুক্তিগত পরিকল্পনা'র মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যেই ২ শতাংশের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে প্রস্তাব করেছিলেন যে, মূল প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩.৫ শতাংশ করা হবে এবং বাকি ১.৫ শতাংশ সাইবার নিরাপত্তা বা অবকাঠামোর মতো প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত খাতে ব্যয় করা হবে। স্পেন মনে করে, ২.১ শতাংশ জিডিপি ব্যয় করেই তারা ন্যাটোর মূল সামরিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারবে। এই আর্থিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে মতবিরোধ জোটের ঐক্যের ওপর এক গভীর রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। ট্রাম্পের পূর্বেও তার প্রথম মেয়াদে প্রতিরক্ষা ব্যয় নিয়ে অসন্তুষ্ট দেশগুলোকে ন্যাটো সুরক্ষার বিষয়ে সতর্ক করার নজির রয়েছে।