মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে তাদের সামরিক উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। পুয়ের্তো রিকোর প্রাক্তন নৌ-ঘাঁটি রোসফেল্ট রোডসে (বর্তমানে জোসে আপোন্তে দে লা তোরে বিমানবন্দর) এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, ভি-২২ অসপ্রে বিমান এবং হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। এই অঞ্চলে ডেস্ট্রয়ার, উভচর জাহাজ এবং একটি পারমাণবিক সাবমেরিনও উপস্থিত রয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে যে এই মোতায়েন ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মাদক পাচার মোকাবেলার অংশ। তবে, এটি ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের উপর চাপ বাড়ানোর একটি কৌশল হিসেবেও দেখা হচ্ছে। পেন্টাগন ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ৪,৫০০ জনেরও বেশি সৈন্য মোতায়েন করেছে, যা ১৯৮০-এর দশকের পর এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক অভিযানের সবচেয়ে বড় সমাবেশ।
এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায়, ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো দেশের সার্বভৌমত্ব ও শান্তি রক্ষার জন্য চার মিলিয়নেরও বেশি বলিভারিয়ান ন্যাশনাল মিলিশিয়া সদস্যকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সকল মিলিশিয়া সদস্যকে দেশের ভূখণ্ড রক্ষার জন্য "অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ও প্রস্তুত" থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। অঞ্চলটিতে উত্তেজনা আরও বেড়েছে যখন দুটি ভেনিজুয়েলার যুদ্ধবিমান আন্তর্জাতিক জলসীমায় একটি মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের মুখোমুখি হয়েছিল। এই ঘটনাটি একটি সম্ভাব্য আঞ্চলিক সংকটকে উসকে দিতে পারে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক মহড়া এবং কঠোর বক্তব্য ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। ভেনিজুয়েলা তাদের সামরিক ও মিলিশিয়া বাহিনীকে মোতায়েন করেছে, যা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগজনক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মাদক পাচার রোধের নামে এই অভিযান পরিচালনা করলেও, ভেনিজুয়েলা এটিকে তাদের সার্বভৌমত্বের উপর হুমকি হিসেবে দেখছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে মাদক পাচার মার্কিন আইনের অধীনে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ নয়, যা এই হত্যাকাণ্ডগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মাদক পাচারকারী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাদের সামরিক শক্তি ব্যবহার করছে, যার মধ্যে রয়েছে ট্রেন দে আরাগুয়া, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, পুয়ের্তো রিকোর প্রাক্তন রোসফেল্ট রোডস নৌ-ঘাঁটি, যা এখন জোসে আপোন্তে দে লা তোরে বিমানবন্দর নামে পরিচিত, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ঘাঁটিটি ১৯৮,০০০ একরেরও বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং এখানে একটি ১১,০০০ ফুটের রানওয়ে রয়েছে যা বড় আকারের বাণিজ্যিক ও সামরিক বিমান পরিচালনা করতে সক্ষম। এই ঘাঁটিটি মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ এবং সাবমেরিনগুলির জন্য একটি গভীর সমুদ্র বন্দরও সরবরাহ করে।
এই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং সামরিক উপস্থিতি ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। উভয় দেশই তাদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে, এবং যেকোনো ভুল পদক্ষেপ একটি বৃহত্তর সংঘাতের জন্ম দিতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।