১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এর রাতে, ইউক্রেনীয় স্পেশাল অপারেশনস ফোর্স এবং আনম্যান্ড সিস্টেমস ফোর্স রাশিয়ার লেনিনগ্রাদ ওব্লাস্টের কিরিশি তেল শোধনাগার, যা কিরিশিনেফটিওর্গসিনটেজ (KINEF) নামেও পরিচিত, সেখানে একটি ড্রোন হামলা চালায়। এই শোধনাগারটি রাশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম তেল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র, যার বার্ষিক প্রায় ২০ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা রয়েছে।
লেনিনগ্রাদ ওব্লাস্টের গভর্নর আলেকজান্ডার দ্রোজদেনকো জানিয়েছেন যে রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিরিশি অঞ্চলের কাছে তিনটি ড্রোনকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। ভূপাতিত হওয়া ড্রোনগুলির ধ্বংসাবশেষ শোধনাগারে আগুন লাগিয়ে দেয়, যা পরে নিভিয়ে ফেলা হয়। এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ইউক্রেনীয় জেনারেল স্টাফ এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন যে কিরিশি শোধনাগার রাশিয়ার একটি প্রধান তেল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র, যা প্রায় ৮০ ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন করে। এর মধ্যে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় গ্যাসোলিন, ডিজেল এবং বিমান জ্বালানীর মতো অত্যাবশ্যকীয় জ্বালানি। এই শোধনাগারটি রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীকে জ্বালানি সরবরাহেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই হামলাটি রাশিয়ার জ্বালানি পরিকাঠামোর উপর ইউক্রেনীয় অভিযানের একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ, যার উদ্দেশ্য হলো রাশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করা এবং দেশটির সামরিক বাহিনীর জ্বালানি সরবরাহের ক্ষমতা সীমিত করা। ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলাগুলি রাশিয়ার তেল শোধনাগারগুলির প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষমতাকে অকার্যকর করে দিয়েছে বলে রয়টার্সের বিশ্লেষণে জানা গেছে। এই হামলাগুলি রাশিয়ার জ্বালানি শিল্পে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটিয়েছে এবং দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে।
এই ধরনের হামলার প্রতিক্রিয়ায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো দেশগুলিকে রাশিয়ার উপর আরও কঠোর জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য চাপ বাড়িয়েছে। এর লক্ষ্য হলো রাশিয়ার রাজস্ব হ্রাস করা এবং ইউক্রেনের সংঘাতের অবসান ঘটাতে সহায়তা করা। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প সকল ন্যাটো সদস্যকে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করার এবং অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৮ সালের মধ্যে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস আমদানি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি বজায় রেখেছে, যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।
কিরিশি শোধনাগার, যা সার্গুটনেফতেগ্যাস দ্বারা পরিচালিত হয়, বার্ষিক প্রায় ১৭.৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াকরণ করে, যা রাশিয়ার মোট পরিশোধনের প্রায় ৬.৪%। এই ঘটনাটি সংঘাতের একটি চলমান উত্তেজনাকে নির্দেশ করে, যেখানে উভয় পক্ষই গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো লক্ষ্য করে ক্রমশ উন্নত কৌশল ব্যবহার করছে। ইউক্রেনীয় ড্রোনগুলি রাশিয়ার জ্বালানি পরিকাঠামোতে আঘাত হেনেছে, যা দেশটির অর্থনীতি এবং সামরিক সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই হামলাগুলি ইউক্রেনের দীর্ঘ-পাল্লার ড্রোন ক্ষমতা এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরে গভীর আঘাত হানার সক্ষমতা প্রদর্শন করে।