মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েসের স্ত্রী ভিভিয়ান বার্সি দে মোরায়েসের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপটি প্রাক্তন ব্রাজিলীয় প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিচার এবং কারাদণ্ডের প্রেক্ষাপটে নেওয়া হয়েছে। বলসোনারোকে ২০২২ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ২৭ বছরের বেশি কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ দপ্তর (OFAC) গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্ট-এর অধীনে ভিভিয়ান বার্সি দে মোরায়েস এবং তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান LEX ইনস্টিটিউট-এর উপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই আইনের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভিভিয়ান বার্সি দে মোরায়েসের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সমস্ত সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে তার আর্থিক লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ব্রাজিল। ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটিকে "অন্যায় হস্তক্ষেপ" বলে অভিহিত করেছে এবং ব্রাজিলের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছে। বিচারপতি দে মোরায়েস নিজেও পূর্বে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছিলেন, কারণ তিনি বলসোনারোর বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে যে দে মোরায়েস তার পদ ব্যবহার করে বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন, নির্বিচারে আটকাদেশ দিয়েছেন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমন করেছেন।
অন্যদিকে, বলসোনারোর ছেলে এদুয়ার্দো বলসোনারোকেও এই অভ্যুত্থান মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি মামলায় বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে লবিং করে কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনাগুলো ব্রাজিল-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপগুলো ব্রাজিলের আইনি প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তারের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা এই নিষেধাজ্ঞাগুলোকে "অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপ" বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে ব্রাজিল এই ধরনের আগ্রাসনের কাছে নতি স্বীকার করবে না। এই পরিস্থিতি ব্রাজিলের বৈদেশিক নীতিতেও পরিবর্তন এনেছে, যেখানে দেশটি চীনের সাথে সম্পর্ক জোরদার করছে এবং BRICS-এর মতো বিকল্প জোটের দিকে ঝুঁকছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চাপ ব্রাজিলের উপর এমন প্রভাব ফেলেছে যে তারা বিকল্প বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার চেষ্টা করছে। এই ঘটনাপ্রবাহ ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিভেদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং আগামী নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে।