১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে ব্রাজিলের ফেডারেল সুপ্রিম কোর্ট প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে ২০২২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল বিকৃত করার চেষ্টার জন্য ২৭ বছর এবং তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে। এই যুগান্তকারী রায় বলসোনারোকে অভ্যুত্থানের চেষ্টার জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রথম ব্রাজিলিয়ান প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আদালত বলসোনারো এবং সাতজন সহ-অভিযুক্তকে ক্ষমতা ধরে রাখার ষড়যন্ত্র, অভ্যুত্থান পরিকল্পনা এবং সশস্ত্র অপরাধমূলক সংগঠনে অংশগ্রহণের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছে। অভিযোগগুলির মধ্যে ছিল গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সহিংস বিলুপ্তি, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি এবং সংরক্ষিত সাংস্কৃতিক সম্পদের অবনতি।
মামলার বিচারক আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েস উল্লেখ করেছেন যে সরকারের লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্রকে উপেক্ষা করে ক্ষমতায় থাকা, যা তিনি অভ্যুত্থানমূলক আচরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বলসোনারো এই অভিযোগগুলি অস্বীকার করেছেন এবং বিচারকে 'উইচ হান্ট' বা ডাইনি শিকার বলে অভিহিত করেছেন, তিনি তার কাজগুলিকে সাংবিধানিক বলে দাবি করেছেন এবং রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তার আইনজীবী এই রায়কে অত্যন্ত অতিরিক্ত এবং অনুপযুক্ত বলে মনে করেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই রায়কে 'অত্যন্ত আশ্চর্যজনক' বলে অভিহিত করেছেন এবং নিজের অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করেছেন, বলেছেন, 'তারা আমার সাথে যা করার চেষ্টা করেছিল, ঠিক তেমনই, কিন্তু তারা সফল হয়নি।' মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে 'উইচ হান্ট' বলে সমালোচনা করেছেন এবং উপযুক্ত মার্কিন প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রুবিওর মন্তব্যকে ব্রাজিলের কর্তৃত্বের উপর আক্রমণ এবং তথ্যের প্রতি অবহেলা বলে অভিহিত করেছে, তবে তারা জানিয়েছে যে ব্রাজিলের গণতন্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা ভীত হবে না।
এই রায় ব্রাজিলের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নির্দেশ করে। বলসোনারো, যিনি ২০২২ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য একটি অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিলেন, তাকে এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এই মামলার তদন্ত ফেডারেল পুলিশ এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, যা ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বলসোনারো এবং তার সহযোগীদের দ্বারা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের অভিযোগ এনেছিল। এর মধ্যে ছিল নির্বাচনের আগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনগুলির বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করা এবং অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করা। ব্রাজিলের বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই রায় প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। যদিও বলসোনারো আপিলের সুযোগ পাবেন, তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এবং রায় ব্রাজিলের গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই ঘটনাটি ব্রাজিলের দীর্ঘদিনের অভ্যুত্থানের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, কারণ এটি প্রথমবারের মতো একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে গণতন্ত্রকে দুর্বল করার চেষ্টার জন্য দায়ী করা হয়েছে। এই রায় ব্রাজিলের বিচার বিভাগের দৃঢ়তা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার অঙ্গীকারের প্রতিফলন।