আমদানি করা মাঝারি ও ভারী ট্রাকের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ: অর্থনৈতিক ভারসাম্যের নতুন চালিকাশক্তি

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আগামী ১ নভেম্বর, ২০২৫ থেকে আমদানি করা সমস্ত মাঝারি ও ভারী ট্রাকের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে ট্রাম্প ১ অক্টোবর থেকে শুল্ক আরোপের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু তারিখটি ১ নভেম্বরে স্থানান্তরিত করা হয়। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো মার্কিন নির্মাতাদের 'অন্যায্য বহিরাগত প্রতিযোগিতা' থেকে সুরক্ষা প্রদান করা, যেখানে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রধান যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এই নতুন শুল্কের ঘোষণাটি বাণিজ্য বিভাগ কর্তৃক এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া একটি ফেডারেল তদন্তের ফল, যা বাণিজ্য সম্প্রসারণ আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ী করা হয়েছিল। এই ধারাটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য পণ্যগুলির উপর আমদানি কর আরোপের অনুমতি দেয়।

এই নতুন শুল্কের আওতায় ডেলিভারি ট্রাক, আবর্জনা বহনকারী ট্রাক, জনUtility ট্রাক, ট্রানজিট ও স্কুল বাস, সেমি-ট্রাক এবং ভারী কাজের জন্য ব্যবহৃত যানবাহন সহ বিস্তৃত পরিসরের যানবাহন অন্তর্ভুক্ত হবে। এই পদক্ষেপটি অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে শক্তিশালী করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ, যা পেটারবিল্ট এবং কেনওয়ার্থের মতো মার্কিন প্রস্তুতকারকদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা এনে দিতে পারে। এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে PACCAR-এর মতো কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমদানি করা ট্রাকের ক্ষেত্রে মেক্সিকো বর্তমানে প্রধান রপ্তানিকারক দেশ, যেখানে রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে প্রায় ১,১০,০০০ ইউনিট থেকে তা বার্ষিক প্রায় ৩,৪০,০০০ ইউনিটে উন্নীত হয়েছে। ২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মোট ২,৪৫,৭৬৪টি মাঝারি ও ভারী-শুল্কের ট্রাক আমদানি করেছিল, যার মধ্যে মেক্সিকো থেকে আসা ট্রাকের মূল্য ছিল প্রায় ১৫.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কানাডা থেকে আসা ট্রাকের মূল্য ছিল প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানি করা মাঝারি ও ভারী-শুল্কের ট্রাকের ৬২.৭% মেক্সিকো থেকে আসে।

তবে, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রধান ট্রাক প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি, যেমন ডাইমলার ট্রাক, পাকার, ভলভো গ্রুপ এবং ট্রাটন, তাদের বিরোধিতা জানিয়েছে। তারা বিদ্যমান সরবরাহ শৃঙ্খলে সম্ভাব্য বিঘ্ন এবং ভোক্তাদের জন্য বর্ধিত খরচের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইউ.এস. চেম্বার অফ কমার্সও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে, কারণ আমদানি করা ট্রাকের শীর্ষ পাঁচটি উৎসের দেশই হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র বা ঘনিষ্ঠ অংশীদার, যারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করে না বলে তারা মনে করে। মেক্সিকো, কানাডা, জাপান, জার্মানি এবং ফিনল্যান্ড হলো শুল্ক মূল্যের ভিত্তিতে শীর্ষ পাঁচটি আমদানি উৎস দেশ।

শিল্প বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন যে নতুন আরোপিত শুল্কের ফলে যানবাহনের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং প্রস্তুতকারকদের তাদের উৎপাদন কৌশল পুনর্বিবেচনা ও সমন্বয় করতে বাধ্য হতে পারে। যদিও মাঝারি ও ভারী-শুল্কের ট্রাকগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক স্বয়ংক্রিয় বাজারের ৫% অংশ, তবে উত্তর আমেরিকায় এই ধরনের যানবাহনের চাহিদার ৮০% এই দেশ থেকে আসে। অতীতে এ ধরনের সংরক্ষণবাদী পদক্ষেপ প্রায়শই বাণিজ্য অংশীদারদের পক্ষ থেকে পাল্টা পদক্ষেপের জন্ম দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি চেইন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে আমদানি করা যন্ত্রাংশের মূল্য বৃদ্ধি পরোক্ষভাবে আমেরিকান অ্যাসেম্বলারদের উৎপাদন খরচও বাড়িয়ে দিতে পারে। এই নতুন নীতিমালার পূর্ণ প্রভাব আগামী মাসগুলিতে ট্রাক শিল্প এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে আরও স্পষ্ট হবে, যা ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের জন্য একটি নতুন বাস্তবতার সূচনা করছে।

উৎসসমূহ

  • Owensboro Messenger-Inquirer

  • CBT News

  • FleetOwner

  • IndustryWeek

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।