২০২৫ সালের শেষ নাগাদ সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি, যার মধ্যে গোলান মালভূমি থেকে সেনা প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত, তার কাছাকাছি পৌঁছানোর খবর
সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович
শোনা যাচ্ছে যে সিরিয়া এবং ইসরায়েলের মধ্যে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ একটি সুদূরপ্রসারী শান্তি চুক্তি সম্পন্ন হতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যের জটিল ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। কয়েক দশক ধরে প্রকাশ্য সংঘাতের মধ্যে থাকা এই দুটি রাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সম্ভাব্য অগ্রগতি একটি মৌলিক পরিবর্তন আনবে। প্রস্তাবিত চুক্তির মূল ভিত্তি হলো সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা দখলকৃত সকল সিরীয় ভূখণ্ড, যার মধ্যে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাউন্ট হারমন চূড়াও অন্তর্ভুক্ত, সেখান থেকে পর্যায়ক্রমিকভাবে সেনা প্রত্যাহার।
এই চুক্তির বিষয়ে যে গুঞ্জন চলছে, তা দুই পক্ষের মধ্যে চলমান সরাসরি যোগাযোগের কারণে আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। একটি প্রস্তাব এসেছে যে গোলান মালভূমি অঞ্চলকে এক ধরনের 'শান্তির বাগান' (Garden of Peace) হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে। এর মাধ্যমে সংঘাতের দিক থেকে সরে এসে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যৌথ প্রকল্পের সম্ভাবনা তৈরি হবে। প্রায় ১৮০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গোলান মালভূমি ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েলের দখলে রয়েছে এবং ১৯৮১ সালে তারা এটিকে সংযুক্ত করে নেয়। তবে জাতিসংঘ সহ বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংযুক্তিকে ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, যেখানে ভূখণ্ডটির কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম, উভয় পক্ষের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার গভীর প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে।
লেবাননের সূত্র অনুযায়ী, বর্তমান আলোচনা সিরীয় পক্ষের অগ্রাধিকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে। ডিসেম্বর ২০২৪ সালে ক্ষমতায় আসা আহমেদ আশ-শারা (Ahmed ash-Shaaraa)-এর নেতৃত্বাধীন নতুন প্রশাসন আন্তর্জাতিক বৈধতা অর্জন এবং জানুয়ারি ২০২৫ সাল থেকে দখলকৃত এলাকাগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহারের দিকে মনোনিবেশ করছে। ভূখণ্ডগত দাবির ওপর জোর না দিয়ে নতুন সরকারের রাজনৈতিক স্বীকৃতির দিকে এই মনোযোগের স্থানান্তর চুক্তির অগ্রগতির জন্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। গণমাধ্যম জানাচ্ছে যে, সিরিয়া গোলান মালভূমির সম্পূর্ণ অঞ্চলের প্রত্যাবর্তনের জন্য কঠোরভাবে চাপ দিচ্ছে না। আহমেদ আশ-শারা, যিনি ডিসেম্বর ২০২৪ সাল থেকে সিরিয়ার কার্যত প্রধান, আন্তর্জাতিক বৈধতা অর্জনের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন এবং এর অংশ হিসেবে ২০২৫ সালের ১১ নভেম্বর হোয়াইট হাউস সফর করেছেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের অবস্থান এখনও অনড়। পররাষ্ট্র মন্ত্রী গিডিওন সা'আর (Gideon Sa'ar) ২০২৫ সালের জুন মাসে স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন যে যেকোনো শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে গোলান মালভূমি ইসরায়েলের অংশ হিসেবেই থাকবে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের কঠোর অবস্থান আলোচনার পূর্ণাঙ্গ সফলতার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, কারণ গোলানের প্রত্যাবর্তন ঐতিহ্যগতভাবে দামেস্কের জন্য একটি প্রধান শর্ত ছিল। কাতার, জর্ডান, তুরস্ক, সৌদি আরব, মিশর এবং জার্মানি সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অতীতে গোলানে ইসরায়েলের বসতি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
২০২৫ সালের শেষ নাগাদ এই মীমাংসার সফলতা নির্ভর করবে পক্ষগুলো একে অপরের মধ্যে কেবল প্রতিপক্ষকে না দেখে, বরং নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য তাদের নিজস্ব আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখতে পারে কিনা তার ওপর। বর্তমানে জাতিসংঘ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা অসামরিকীকৃত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যে বিভাজন রেখাটি গেছে, তা সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি নতুন কাঠামো দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে পারে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সকল অংশগ্রহণকারীকে তাদের অভ্যন্তরীণ ধারণাগুলি গভীরভাবে পুনর্বিবেচনা করতে হবে যে কোনটি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
উৎসসমূহ
FinanzNachrichten.de
Israel, Syria Nearing Historic Peace Deal by 2025, Including Golan Withdrawal, Says Syrian Source
Syrian gov’t source: Peace agreement with Israel possible by end of 2025
Several countries slam Israeli plans to expand settlements in Syria’s Golan
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
