১৮ নভেম্বর ট্রাম্প ও সৌদি যুবরাজের কর্মশালা বৈঠক নির্ধারিত

সম্পাদনা করেছেন: S Света

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)-এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালা বৈঠক ২০২৫ সালের ১৮ নভেম্বর হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। যদিও এই সফরটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রীয় সফরের মর্যাদা দেওয়া হয়নি, তবুও এর কৌশলগত গুরুত্ব বোঝাতে সাউথ লনে আগমন অনুষ্ঠান এবং সাউথ পোর্টিকে অভ্যর্থনা জানানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গভীরতাকেই তুলে ধরে।

এই আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও মজবুত করা। বিশেষ করে জ্বালানি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হবে। আমেরিকান সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, এজেন্ডায় বহু-বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষত প্রতিরক্ষা খাতে। সম্প্রতি কাতারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের যে চুক্তি হয়েছে, যেখানে মিত্রের উপর আক্রমণকে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হিসেবে গণ্য করা হয়, তার অনুরূপ একটি চুক্তি সৌদি আরবের সাথেও হতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েল ও আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলের কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের পর ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের এটিই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। ওই ঘটনার কারণে কূটনৈতিক সম্পর্কগুলোতে পূর্বে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল।

এই সফরের আবহে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (Human Rights Watch)-এর মতো মানবাধিকার সংগঠনগুলো মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন সৌদি আরবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো আলোচনায় তোলা হয়। কূটনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি, সৌদি আরব 'ভিশন ২০৩০' কর্মসূচির অধীনে অভ্যন্তরীণ রূপান্তর অব্যাহত রেখেছে। এর অংশ হিসেবে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে রিয়াদে আবাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পত্তির ভাড়া বৃদ্ধির উপর পাঁচ বছরের জন্য স্থগিতাদেশ (মোরাটোরিয়াম) জারি করা হয়েছিল। ক্রাউন প্রিন্স কর্তৃক মূল্য বৃদ্ধিকে 'অগ্রহণযোগ্য স্তর' হিসেবে অভিহিত করার পরই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এখন থেকে রাজধানীতে সমস্ত ভাড়া চুক্তি জাতীয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম 'ইজার' (Ejar)-এর মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে হবে।

প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল ২০২৫ সালের ১২ মে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি 'হিউম্যান' (Humain)-এর উদ্বোধন। ক্রাউন প্রিন্সের তত্ত্বাবধানে এবং প্রায় ৯৪০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ পরিচালনাকারী পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (PIF)-এর সমর্থনে এটি পরিচালিত। 'হিউম্যান'-এর লক্ষ্য হলো এআই-এর সম্পূর্ণ ভ্যালু চেইন তৈরি করা, যার মধ্যে শক্তিশালী বহুভাষিক আরবি লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (LLM) তৈরি করা এবং ডেটা সেন্টার স্থাপন করা। এর মাধ্যমে কিংডমকে বৈশ্বিক এআই কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় রিয়াদ। ২০২৫ সালের মে মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফরের সময়, 'হিউম্যান' আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব চুক্তি করে। এর মধ্যে এনভিডিয়ার (Nvidia) সাথে ১৮,০০০ ব্ল্যাকওয়েল অ্যাক্সিলারেটর সরবরাহের চুক্তি এবং এএমডি-র (AMD) সাথে যৌথ প্রকল্পে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ওয়াশিংটনে আসন্ন এই বৈঠকটিকে উভয় পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে দৃশ্যমান ফলাফল নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। আলোচনার কেন্দ্রীয় বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা, যার জন্য ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি রোডম্যাপ প্রয়োজন, এবং আমেরিকান এআই চিপগুলিতে রিয়াদের প্রবেশাধিকারের প্রশ্ন। এই সফরটি প্রমাণ করে যে রিয়াদ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে নতুন আঞ্চলিক কাঠামো গঠনে একজন সক্রিয় উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছে।

উৎসসমূহ

  • The Straits Times

  • Trump to welcome the Saudi crown prince with arrival ceremony, deal signings and lavish dinner

  • Trump Gets Lavish Welcome in First Stop of Middle East Tour

  • Saudi Arabia launches company to develop artificial intelligence under PIF

  • Saudi Arabia freezes rent hikes in Riyadh for five years amid price surge

  • Readout of President Donald J. Trump Call with Crown Prince Mohammed bin Salman

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।