সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফর: ২৫ বছরের কূটনৈতিক বরফ গলানোর প্রচেষ্টা

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

প্রায় আড়াই দশক পর সিরিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওয়াশিংটন ডিসি সফর একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা এই সফরকে 'ঐতিহাসিক' আখ্যা দিয়ে জানিয়েছে যে, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে 'সরাসরি সংলাপ' এবং 'নতুন অধ্যায়' উন্মোচনে প্রস্তুত। এই সফর সিরিয়া-মার্কিন সম্পর্ককে এক নতুন মোড় দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, যদিও ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ এখনও বাকি রয়েছে।

সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানীর এই সফর মূলত দেশটির উপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাথে এক বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এই ঐতিহাসিক সফরের প্রেক্ষাপট বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসানের পর দেশটির অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন ছিল এবং এই সফরের মাধ্যমে সিরিয়া তার হারানো আন্তর্জাতিক অবস্থান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। ১৯৯৯ সালে সিরিয়ার তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফারুক আল-শারা ইসরায়েলের সাথে শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন, যা ছিল ২৫ বছরের মধ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর।

মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সাথেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের কথা রয়েছে, যেখানে সিরিয়ার উপর আরোপিত সিজার আইনের মতো নিষেধাজ্ঞাগুলো স্থায়ীভাবে প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম জানিয়েছেন যে, সিরিয়া যদি ইসরায়েলের সাথে নিরাপত্তা চুক্তি করে এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সাথে যুক্ত হয়, তবে তিনি সিজার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সমর্থন জানাবেন। এই আইনটি ২০২০ সালে কার্যকর হয়েছিল এবং সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় সংঘটিত নৃশংসতার প্রতিক্রিয়ায় আসাদ সরকারের উপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এই কূটনৈতিক উদ্যোগের পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং সিরিয়া-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারা সম্প্রতি বলেছেন যে, ইসরায়েলের সাথে নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা ফলপ্রসূ হতে পারে।

অর্থনৈতিকভাবে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো সিরিয়ার অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটির জিডিপি ৪৩% এর বেশি হ্রাস পেয়েছে। সিরীয় মুদ্রা ডলারের বিপরীতে তার মান হারিয়েছে, যার ফলে দেশটির অর্থনীতিতে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো কেবল সরকারি পর্যায়েই নয়, বরং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকেও প্রভাবিত করেছে, যা জ্বালানি থেকে শুরু করে ঔষধপত্রের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি সৃষ্টি করেছে। এই সফর সিরিয়ার জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে, যেখানে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির অবস্থান সুদৃঢ় করার সুযোগ থাকবে।

উৎসসমূহ

  • Berner Zeitung

  • Gespräche in Saudi-Arabien: USA holen Russland aus der Isolation - Rubio trifft Lawrow

  • US-Außenminister Rubio trifft sich diese Woche mit ukrainischen Amtskollegen in Saudi-Arabien

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।