১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে রাশিয়ার তিনটি মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান এস্তোনিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা ইউরোপীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, এস্তোনিয়া ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি জরুরি অধিবেশন আহ্বান করেছে। এই ঘটনাটি কেবল দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেনি, বরং এটি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার সম্মিলিত প্রচেষ্টার গুরুত্বকে তুলে ধরে।
এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে যে রাশিয়ার তিনটি মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশ করে এবং প্রায় ১২ মিনিট ধরে সেখানে অবস্থান করে। বিমানগুলোর কোনো ফ্লাইট প্ল্যান ছিল না, তাদের ট্রান্সপন্ডার বন্ধ ছিল এবং তারা এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের সাথে কোনো যোগাযোগও রাখেনি। এই ঘটনার পর, ন্যাটো জোটের ইতালি ভিত্তিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানগুলো দ্রুত এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশ করে এবং রাশিয়ান বিমানগুলোকে আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় ফিরিয়ে দেয়। এটি ছিল এই বছরের এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় রাশিয়ার চতুর্থ লঙ্ঘন, তবে এটিই প্রথমবার ছিল যেখানে সুপারসনিক যুদ্ধবিমান জড়িত ছিল।
এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্গাস নাহকনা এই ঘটনাকে "অত্যন্ত বিপজ্জনক উস্কানি" এবং "অভূতপূর্ব ধৃষ্টতা" বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে রাশিয়ার এই কর্মকাণ্ড জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য নীতিগুলোকে ক্ষুণ্ন করে এবং এটি একটি "গুরুতর উত্তেজনা বৃদ্ধি"। এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টেন মিশাল এই ঘটনাকে "দুরভিসন্ধি" বলে বর্ণনা করেছেন এবং ন্যাটো চুক্তির ধারা ৪ (Article 4) সক্রিয় করেছেন, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হলে আলোচনা শুরু করার সুযোগ দেয়।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে বিমানগুলো একটি পরিকল্পিত উড়ান পরিচালনা করছিল এবং এস্তোনিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি, বরং বাল্টিক সাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমার উপর দিয়ে উড়ে গেছে। রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এস্তোনিয়ার দাবিকে "খালি, ভিত্তিহীন এবং উত্তেজনা বৃদ্ধির একটি ধারাবাহিক নীতি" বলে অভিহিত করেছেন।
এই ঘটনাটি কেবল এস্তোনিয়ার মধ্যেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ ইয়েনচা নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলেছেন যে জাতিসংঘ এই অভিযোগগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করতে "অবস্থানে নেই", তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে "সার্বভৌম দেশগুলোর আকাশসীমা লঙ্ঘন অগ্রহণযোগ্য"। তিনি সকল পক্ষকে দায়িত্বশীল আচরণ এবং উত্তেজনা প্রশমনের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ন্যাটো জোট তাদের পূর্ব সীমান্তকে শক্তিশালী করার জন্য 'ইস্টার্ন সেন্ট্রি' (Eastern Sentry) মিশন চালু করেছে। এই ধরনের ঘটনাগুলো বিশ্বজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার গুরুত্বকে তুলে ধরে।