১৯৮৭ সালে স্বাক্ষরিত ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (INF) ট্রিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে রাশিয়া কর্তৃক পরিত্যাজ্য হয়েছে। এই চুক্তিটি ৫০০ থেকে ৫,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ভূমি-ভিত্তিক ক্রুজ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিষিদ্ধ করে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই চুক্তির লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছিল, বিশেষ করে ৯এম৭২৯ ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়ন ও মোতায়েনের কারণে। এই পরিস্থিতিতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার ইউক্রেনীয় কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন এবং ৮ আগস্ট ২০২৫ সালের মধ্যে কূটনৈতিক সমাধান না হলে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন। অন্যদিকে, রাশিয়া জানিয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'গোল্ডেন ডোম' ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনা পুনরায় শুরু করার একটি সম্ভাব্য পথ খুলে দিতে পারে। রাশিয়ার INF চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং এর ফলে সৃষ্ট উত্তেজনা বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে একটি ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা নির্দেশ করে।
এই চুক্তির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যায়, ১৯৮৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান এবং সোভিয়েত জেনারেল সেক্রেটারি মিখাইল গর্বাচেভ এটি স্বাক্ষর করেছিলেন। এই চুক্তির মাধ্যমে প্রায় ২,৭০০ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছিল, যা উভয় দেশের পারমাণবিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছিল। এটি ছিল পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতে সহায়ক হয়েছিল। তবে, ২০১৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে চুক্তির শর্তাবলী লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়। রাশিয়া তখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনুরূপ অস্ত্র মোতায়েন না করা পর্যন্ত তারাও তা করবে না। কিন্তু এখন রাশিয়া তাদের এই স্ব-আরোপিত সীমাবদ্ধতা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ইউরোপ ও এশিয়াতে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার এবং নতুন প্রজন্মের ভূমি-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করছে। এই পরিস্থিতি পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করেছে এবং বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষ করে ইউরোপের ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রগুলো এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো রাশিয়ার এই পদক্ষেপের দ্বারা সরাসরি হুমকির সম্মুখীন। এই ঘটনাটি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।