পেরু কর্তৃক মেক্সিকোর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন: বেটসি চাভেজকে আশ্রয় প্রদানকে কেন্দ্র করে তীব্র সংকট

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

Бетси Чавес, যিনি ২৫ নভেম্বর ২০২২ থেকে ৭ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত পেরুর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

২০২৫ সালের ৩ নভেম্বর পেরু সরকার মেক্সিকোর সঙ্গে তাদের সমস্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এই কঠোর পদক্ষেপটি ছিল মেক্সিকো সিটির একটি সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রতিক্রিয়া—তারা পেরুর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেটসি চাভেজকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান করেছিল। চাভেজ বর্তমানে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে তদন্তাধীন রয়েছেন এবং পেরু সরকার এটিকে তাদের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হিসেবে দেখছে।

পেরুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুগো দে জেলা মেক্সিকোর এই কাজকে ‘অবন্ধুসুলভ কার্যকলাপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, মেক্সিকোর বর্তমান ও পূর্ববর্তী উভয় নেতৃত্বই পেরুর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বারবার হস্তক্ষেপ করেছে, যার চূড়ান্ত ফল হলো এই সম্পর্কচ্ছেদ। পেরুর অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হোসে জেরি অবিলম্বে লিমায় নিযুক্ত মেক্সিকোর চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স কার্লা অর্নেলাকে দেশ থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে চলে যাওয়ার জন্য কঠোর সময়সীমা বেঁধে দেন। অন্যদিকে, মেক্সিকো এই সিদ্ধান্তকে ‘অতিরিক্ত ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা দাবি করেছে যে চাভেজকে আশ্রয় দেওয়া আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষত ১৯৫৪ সালের কারাকাস কনভেনশন অনুযায়ী সম্পূর্ণ বৈধ ছিল।

বর্তমান সংকটের মূল নিহিত রয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের ঘটনাপ্রবাহে, যখন প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্টিলোকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। মেক্সিকোর পক্ষ, যার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবাউমও অন্তর্ভুক্ত, কাস্টিলোর গ্রেপ্তারকে অন্যায় বলে ধারাবাহিকভাবে সমালোচনা করে আসছিলেন। কাস্টিলোর অধীনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বেটসি চাভেজের বিরুদ্ধে কংগ্রেস ভেঙে দেওয়ার প্রচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাকে ২০২৩ সালের জুন মাসে গ্রেপ্তার করা হলেও, বিচার চলাকালীন সময়ে তিনি যেন দেশত্যাগ না করেন সেই শর্তে একজন বিচারক তাকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তি দেন। এরপরই তাকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি কূটনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেয়।

গুরুতর কূটনৈতিক সংঘাত সত্ত্বেও, উভয় দেশই অন্যান্য ক্ষেত্রে ক্ষতি হ্রাস করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। নাগরিকদের পরিষেবা প্রদানের জন্য কনস্যুলার সম্পর্কগুলি এখনও কার্যকর রাখা হয়েছে এবং এই ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করা হয়নি। এর পাশাপাশি, অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলিও অক্ষুণ্ণ রয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে উভয় পক্ষই সংঘাতকে কেবল রাজনৈতিক স্তরে সীমাবদ্ধ রাখতে আগ্রহী।

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার এই প্রবণতা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ২০২৪ সালে পেরু ও মেক্সিকোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ২.৫০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল। এই বাণিজ্যে পেরুর কৃষি খাত একটি বিশাল অংশীদার ছিল, যা মেক্সিকোতে তাদের মোট রপ্তানির ৪৯ শতাংশ নিশ্চিত করেছিল। এই ধরনের ঘটনা লাতিন আমেরিকার আঞ্চলিক রাজনীতিতে বৃহত্তর পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। এই কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার ফলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় জোটের (Pacific Alliance) মতো আঞ্চলিক কাঠামোর ভবিষ্যৎ এবং সামগ্রিক আঞ্চলিক সংহতির সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

উৎসসমূহ

  • L'Antidiplomatico

  • El País México

  • Infobae Perú

  • Euronews España

  • Periódico Correo

  • Infobae México

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।