ইউরোপীয় দেশগুলোর ইসরায়েলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান এবং ফ্রান্স-ইসরায়েল কূটনৈতিক উত্তেজনা
সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович
গাজার চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় দেশগুলো কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণের দিকে ঝুঁকছে। উত্তর আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের রাজনৈতিক নেতারা ইসরায়েলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছেন। তাদের দাবির মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার আহ্বানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারা গাজায় কথিত ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধের একটি স্বাধীন তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন, যা গাজার মানবিক সংকট, বিশেষ করে বেসামরিক হতাহত এবং বাস্তুচ্যুতির ভয়াবহতাকে তুলে ধরেছে।
অন্যদিকে, ফ্রান্সের সাথে ইসরায়েলের কূটনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। জেরুজালেমে ফ্রান্সের কনস্যুলেট বন্ধের ইসরায়েলি সিদ্ধান্তের পর ফ্রান্সের ইউরোপ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই পদক্ষেপটি ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পর নেওয়া হয়েছে এবং এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে ফ্রান্সের সমর্থন এবং কনস্যুলেটের বিরুদ্ধে ইসরায়েল-বিরোধী অবস্থানকে উস্কে দেওয়ার অভিযোগ এনে এই কনস্যুলেট বন্ধের আদেশ দিয়েছেন।
নরওয়ের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল অধিকৃত অঞ্চলে কর্মরত ছয়টি ইসরায়েলি কোম্পানি থেকে তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। নরওয়ের অর্থমন্ত্রী ট্রাইগভ স্লাগসভোল্ড ভেডুম এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন, যা সংঘাত এবং এর মানবিক প্রভাবের প্রতি ইউরোপের বৃহত্তর অবস্থানকে প্রতিফলিত করে। এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের প্রতি দেশটির অঙ্গীকারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বলে জানানো হয়েছে।
গাজার মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২ লক্ষ ৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছেন, যার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। এছাড়াও, ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই পরিসংখ্যানগুলো সংঘাতের ভয়াবহ মানবিক পরিণতির চিত্র তুলে ধরে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আরও পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাকে জোরদার করে।
এই ঘটনাগুলো ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি ক্রমবর্ধমান কঠোর মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক নেতাদের নিষেধাজ্ঞার আহ্বান এবং নরওয়ের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এই অঞ্চলের প্রতি তাদের নীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নির্দেশ করে। ফ্রান্স এবং ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক বিবাদ, যা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে ফ্রান্সের স্বীকৃতির সাথে সম্পর্কিত, এই অঞ্চলের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিলতা এবং সংবেদনশীলতাকে তুলে ধরে। গাজায় হতাহত এবং বাস্তুচ্যুতির পরিসংখ্যানগুলো এই আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াগুলোর জন্য একটি শক্তিশালী নৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা যোগায়। এই পদক্ষেপগুলো ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে প্রতিফলিত করে যেখানে তারা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের বিষয়ে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
উৎসসমূহ
Aljazeera
2025 in Palestine
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক চারটি লাতিন আমেরিকান দেশের সাথে বাণিজ্য কাঠামোগত চুক্তি ঘোষণা
বেলগ্রেডে ইতালীয় মন্ত্রী চিরিয়ানির সফর: সার্বিয়ার ইউরোপীয় ইন্টিগ্রেশন এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ
ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ লাভে হাঙ্গেরির ভেটো বহাল: সংস্কার ও নিয়ম পরিবর্তনের প্রস্তাবের মধ্যে অচলাবস্থা
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
