ইউক্রেন কর্তৃক ড্রুঝবা তেল পাইপলাইনে হামলার পর হাঙ্গেরি রাশিয়ার তেল সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘটনাটি হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়ার জ্বালানি নিরাপত্তার উপর গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজার্তো এই হামলাকে 'উস্কানিমূলক এবং অগ্রহণযোগ্য' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরও বলেন যে, ইউক্রেনীয় বাহিনী তেল পাইপলাইনে আঘাত হেনেছে, যার ফলে হাঙ্গেরিতে সরবরাহ স্থগিত করা হয়েছে।
এই ঘটনাটি ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইউরোপের জ্বালানি সরবরাহের নাজুক পরিস্থিতিকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। ড্রুঝবা পাইপলাইন, যা ১৯৬০-এর দশকে নির্মিত হয়েছিল, রাশিয়ার তেল পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, যেমন হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র এবং জার্মানিতে পরিবহনের জন্য একটি প্রধান মাধ্যম। এই পাইপলাইনটি রাশিয়ার তেল রপ্তানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে বিবেচিত হয়।
হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিজার্তো উল্লেখ করেছেন যে, এই ধরনের হামলা হাঙ্গেরির জ্বালানি নিরাপত্তাকে সরাসরি আঘাত করছে এবং এটি একটি সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ। তিনি আরও বলেন যে, ইউক্রেন এবং ব্রাসেলস গত সাড়ে তিন বছর ধরে হাঙ্গেরিকে যুদ্ধে টেনে আনার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই সিবিহা এই পরিস্থিতির জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছেন এবং হাঙ্গেরিকে রাশিয়ার উপর জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে বলেছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন যে, হাঙ্গেরির উচিত মস্কোর কাছে তাদের অভিযোগ জানানো।
ইউরোপীয় কমিশন এই বিষয়ে হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়ার সাথে যোগাযোগ রাখছে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা বজায় রাখার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে। তারা জানিয়েছে যে, সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়া উচিত নয় এবং সরবরাহ ব্যবস্থা নির্ভরযোগ্য রাখা তাদের অগ্রাধিকার। এই ঘটনাটি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ইউরোপীয় দেশগুলির জ্বালানি নিরাপত্তার উপর এর প্রভাবকে তুলে ধরেছে।
হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়ার মতো দেশগুলি, যারা রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর নির্ভরশীল, তারা এই ধরনের ঘটনায় বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইউক্রেনের এই পদক্ষেপগুলি রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামোর উপর আঘাত হানার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা রাশিয়ার যুদ্ধের অর্থায়নের একটি প্রধান উৎস। ঐতিহাসিকভাবে, ড্রুঝবা পাইপলাইন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছিল, যা 'বন্ধুত্ব' নামে পরিচিত। তবে বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এটি একটি সংবেদনশীল ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
হাঙ্গেরি তার জ্বালানি সরবরাহের প্রায় ৬৫ শতাংশ এই পাইপলাইনের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। এই ঘটনার পর, রাশিয়া জানিয়েছে যে, পাইপলাইনের কার্যক্রম পুনরুদ্ধারের জন্য প্রযুক্তিবিদরা কাজ করছেন, তবে সরবরাহ কখন পুনরায় শুরু হবে তা অনিশ্চিত।