রওয়ান্ডা সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার এক উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, যা প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি বিনিয়োগ পরিকল্পনার মাধ্যমে চালিত হচ্ছে। এই বিস্তৃত জ্বালানি নীতিটি ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ উন্মোচন করা হয়, যার মূল উদ্দেশ্য হলো জাতীয় গ্রিড সম্প্রসারণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অফ-গ্রিড সৌর সমাধানের প্রসারে মনোযোগ দেওয়া। এই উদ্যোগটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
এই প্রচেষ্টার একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত হলো লেক মুগেসেরার কাছে সদ্য সমাপ্ত ৮.৫ মেগাওয়াট (MW) সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই কেন্দ্রটি দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬% বৃদ্ধি করেছে এবং ১৫,০০০-এরও বেশি পরিবারকে আলো সরবরাহ করছে। কেন্দ্রটিতে ব্যবহৃত ২৮,৩৬০টি সূর্য-অনুসরণকারী প্যানেল স্থির প্যানেলের তুলনায় দক্ষতা ২০% বাড়িয়ে তোলে। এটি পূর্ব আফ্রিকার প্রথম ইউটিলিটি-স্কেল সৌর স্থাপনা হিসেবে পরিচিত, যা দ্রুত বাস্তবায়নের সক্ষমতা প্রমাণ করে। যদিও পূর্বে ২০১৫ সালে এই কেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হয়েছিল এবং তখন এটি দেশের বিদ্যুতের প্রায় ৬% সরবরাহ করত, বর্তমান তথ্য অনুযায়ী রওয়ান্ডার ৮৩.২% পরিবার বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। এর মধ্যে ৫৮.৩% জাতীয় গ্রিডের সাথে সংযুক্ত এবং ২৪.৯% অফ-গ্রিড সৌর সমাধানের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাচ্ছে।
সরকার ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ প্রায় ১,০০০টি বিদ্যালয়কে বিদ্যুতায়িত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, যা সরাসরি সামাজিক উন্নয়নের সাথে শক্তির সংযোগ স্থাপন করে। রওয়ান্ডার জ্বালানি মিশ্রণে নবায়নযোগ্য শক্তির অংশীদারিত্ব বাড়ানোর দৃঢ় সংকল্প রয়েছে; ২০৩৫ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা ৬৫% নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে জলবিদ্যুৎ প্রধান উৎস হলেও, বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরা দেখা দিলে এই একক নির্ভরতা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে সৌরশক্তির দিকে মনোনিবেশ করা একটি দূরদর্শী পদক্ষেপ।
এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের পরিমাণও সুনির্দিষ্টভাবে নিরূপণ করা হয়েছে। ২০৩৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যার মধ্যে স্বল্পমেয়াদী সৌর প্রকল্পগুলির জন্য প্রায় ৬৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়াও, ২০৫০ সালের মধ্যে ব্যাটারি সঞ্চয়স্থান সহ প্রায় ১,৪৯২.৮৫ মেগাওয়াট অতিরিক্ত সৌর ফটোভোলটাইক ক্ষমতা যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা গ্রিডের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। এই ধরনের সুচিন্তিত আর্থিক পরিকল্পনা এবং নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতি অবিচল অঙ্গীকার রওয়ান্ডাকে আফ্রিকার জ্বালানি রূপান্তরে এক অগ্রণী অবস্থানে স্থাপন করছে।