চীনের ইউনচেন ২ নামক এক মিলিয়ন বছরের পুরনো খুলির ডিজিটাল পুনর্গঠন মানব বিবর্তনের সময়রেখাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ১৯৯০ সালে আবিষ্কৃত এই জীবাশ্মটি দীর্ঘদিন ধরে বিকৃত অবস্থায় থাকায় এর সঠিক শ্রেণীবিভাগ করা কঠিন ছিল। অত্যাধুনিক সিটি স্ক্যানিং এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে গবেষকরা খুলিটির মূল আকৃতি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। এই গবেষণার ফলাফল ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে 'সায়েন্স' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
পুনর্গঠিত খুলিটি প্রায় ১,১৪৩ ঘন সেন্টিমিটার মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা দেখিয়েছে, যা হোমো ইরেক্টাসের চেয়ে বেশি কিন্তু আধুনিক মানুষের চেয়ে কম। খুলিটিতে আদিম বৈশিষ্ট্য যেমন—প্রবল ভ্রূ-রেখা এবং সামনের দিকে প্রসারিত মুখমণ্ডল, আবার আধুনিক বৈশিষ্ট্য যেমন—উচ্চ গণ্ডাস্থি এবং হ্রাসপ্রাপ্ত পশ্চাৎভাগও পরিলক্ষিত হয়। এই মিশ্র বৈশিষ্ট্যগুলি ইঙ্গিত দেয় যে এটি হোমো লংগি (Homo longi) প্রজাতির একটি প্রাথমিক সদস্য হতে পারে, যা আধুনিক মানুষ এবং ডেনিসোভানদের (Denisovans) সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
এই নতুন বিশ্লেষণ অনুযায়ী, হোমো সেপিয়েন্স (Homo sapiens) এবং হোমো লংগির সাধারণ পূর্বপুরুষ প্রায় ১.৩২ মিলিয়ন বছর আগে বিদ্যমান ছিল, যা পূর্বেকার আনুমানিক ৫০০,০০০ থেকে ৭০০,০০০ বছর আগের ধারণাকে উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে দিয়েছে। এই আবিষ্কার মানব বিবর্তনের জটিলতা এবং পূর্বের ধারণার চেয়ে এর গভীরতা সম্পর্কে নতুন ধারণা প্রদান করে। গবেষকরা, অধ্যাপক জিয়াওবো ফেং (Xiaobo Feng) এর নেতৃত্বে, মনে করেন যে এই নতুন তথ্য মানব বিবর্তনের 'মিডল ইন দ্য মিডল' (Muddle in the Middle) নামক বিভ্রান্তিকর পর্যায়টিকে স্পষ্ট করতে সাহায্য করবে।
এই গবেষণাটি আরও ইঙ্গিত দেয় যে মানব প্রজাতির বিভিন্ন শাখা সম্ভবত আফ্রিকা থেকে নয়, এশিয়া থেকে ভিন্ন পথে বিকশিত হয়েছিল। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে, যেমন ডিজিটাল পুনর্গঠন, জীবাশ্ম গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। এই পদ্ধতিগুলি ক্ষতিগ্রস্ত বা বিকৃত জীবাশ্ম থেকেও মূল্যবান তথ্য বের করে আনতে সক্ষম, যা আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করছে। এই আবিষ্কারটি মানব বিবর্তনের গবেষণায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক নতুন তথ্যের উন্মোচন ঘটাবে বলে আশা করা যায়।