ফুকুওকায় জাপানের প্রথম অসমোটিক পাওয়ার প্ল্যান্ট: টেকসই শক্তির নতুন দিগন্ত

সম্পাদনা করেছেন: Irina Davgaleva

জাপান তার নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের বৈচিত্র্যকরণে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ফুকুওকা প্রদেশে দেশটির প্রথম অসমোটিক পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু হয়েছে, যা সমুদ্রের নোনা জল এবং নদীর মিষ্টি জলের মধ্যে লবণাক্ততার পার্থক্যকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এই প্ল্যান্টটি জাপানের টেকসই শক্তি অর্জনের পথে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এটি ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে কার্যক্রম শুরু করেছে।

ফুকুওকা ডিস্ট্রিক্ট ওয়াটারওয়ার্কস এজেন্সি দ্বারা পরিচালিত এই প্ল্যান্টটি অসমোসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এই প্রক্রিয়ায়, অর্ধভেদ্য ঝিল্লির (semi-permeable membrane) মাধ্যমে কম লবণাক্ততার জল (প্রায় ০.১% লবণাক্ততা) বেশি লবণাক্ততার জলের (প্রায় ৩.৫% লবণাক্ততা) দিকে প্রবাহিত হয়। এই প্রাকৃতিক অসমোটিক চাপকে ব্যবহার করে একটি টারবাইন ঘোরানো হয়, যা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। প্ল্যান্টটি একটি সমুদ্রের জল বিশোধন কেন্দ্র এবং একটি পৌর বর্জ্য জল শোধনাগারের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করে, যা স্থিতিশীল বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করে।

এই প্ল্যান্টটি বছরে প্রায় ৮,৮০,০০০ কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম, যা প্রায় ২২০টি গড় জাপানি পরিবারের বার্ষিক বিদ্যুতের চাহিদার সমান। এই বিদ্যুৎ একটি স্থানীয় জল বিশোধন কেন্দ্রে সরবরাহ করা হবে, যা ফুকুওকা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের জন্য বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করে। ডেনমার্কের একটি প্ল্যান্টের পর এটিই বিশ্বের দ্বিতীয় বাণিজ্যিক অসমোটিক পাওয়ার প্ল্যান্ট। ডেনমার্ক ২০১৩ সালে তাদের প্রথম প্ল্যান্ট চালু করেছিল।

বিশেষজ্ঞরা এই প্রযুক্তিকে ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বলে মনে করছেন। ডঃ আলি আলতাই, ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনির একজন গবেষক, উল্লেখ করেছেন যে জাপানের এই প্ল্যান্টটি ডেনমার্কের প্ল্যান্টের সমতুল্য কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করে। অধ্যাপক সান্দ্রা কেনটিশ, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক, এই উন্নয়নকে অসমোটিক পাওয়ার প্রযুক্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি আরও বলেন যে, উন্নত ঝিল্লি এবং পাম্প প্রযুক্তির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফুকুওকা প্ল্যান্টটি জল বিশোধন কেন্দ্রের ঘনীভূত লবণাক্ত জল ব্যবহার করে কার্যকারিতা বাড়িয়েছে, যা লবণাক্ততার পার্থক্যকে সর্বোচ্চ করে তোলে।

সৌর বা বায়ু শক্তির মতো অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের বিপরীতে, অসমোটিক পাওয়ার আবহাওয়া বা দিনের সময়ের উপর নির্ভরশীল নয়। এটি ২৪ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, কারণ এটি কেবল মিষ্টি জল এবং নোনা জলের মিশ্রণের উপর নির্ভর করে। যদিও এই প্রযুক্তির স্কেলিং এবং কার্যকারিতা নিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, ফুকুওকা প্ল্যান্টের সাফল্য অসমোটিক পাওয়ারের ব্যবহারিক প্রয়োগ এবং এর বিশাল সম্ভাবনা প্রদর্শনে সহায়ক হবে। এই প্রযুক্তি পরিবেশবান্ধব এবং কার্বন নিঃসরণমুক্ত হওয়ায় এটি বিশ্বব্যাপী টেকসই শক্তি সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে পারে।

উৎসসমূহ

  • GameStar

  • Fukuoka Osmotic Power Plant

  • Osmosekraftwerk

  • Japan Launches World’s Second Osmotic Power Plant in Fukuoka

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।