নাসার পারসিভারেন্স রোভার মঙ্গলের জেজেরো ক্রেটার থেকে 'স্যাফায়ার ক্যানিয়ন' নামক একটি পাথরের নমুনা সংগ্রহ করেছে, যা প্রাচীন অণুজীব জীবনের সম্ভাবনার নতুন ইঙ্গিত বহন করছে। এই নমুনাটিতে ভায়ানাইট এবং গ্রেইগাইটের মতো খনিজ পদার্থ পাওয়া গেছে, যা পৃথিবীতে অণুজীব কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। তবে, বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়াও অনুরূপ বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে পারে এবং চূড়ান্ত নিশ্চিতকরণের জন্য পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা নমুনার আরও বিশদ বিশ্লেষণ প্রয়োজন। এই 'স্যাফায়ার ক্যানিয়ন' নমুনাটি জুলাই ২০২৪ সালে সংগ্রহ করা হয়েছিল।
এই নমুনায় পাওয়া 'লেপার্ড স্পট' নামে পরিচিত খনিজগুলির বিন্যাস, যা ভায়ানাইট (জলযুক্ত আয়রন ফসফেট) এবং গ্রেইগাইট (আয়রন সালফাইড) সমৃদ্ধ, তা অণুজীবের বিপাকীয় কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। পৃথিবীতে, ভায়ানাইট প্রায়শই পলি, পিট জলাভূমি এবং পচনশীল জৈব পদার্থের আশেপাশে পাওয়া যায়। একইভাবে, পৃথিবীর কিছু অণুজীব গ্রেইগাইট তৈরি করতে পারে। এই খনিজগুলির উপস্থিতি এবং জৈব কার্বনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক, যা একই শিলায় পাওয়া গেছে, তা ইঙ্গিত দেয় যে এই বৈশিষ্ট্যগুলি জীবনের মাধ্যমে তৈরি হতে পারে।
পারসিভারেন্স রোভারের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রাচীন অণুজীব জীবনের লক্ষণ অনুসন্ধান করা এবং শিলা ও রেগোলিথের নমুনা সংগ্রহ করা যা পৃথিবীতে বিশ্লেষণের জন্য ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। জেজেরো ক্রেটারকে এই অন্বেষণের জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল কারণ প্রমাণ রয়েছে যে এটি একসময় একটি হ্রদ ছিল, যা জীবনের জন্য একটি সম্ভাব্য বাসযোগ্য পরিবেশ ছিল। এই আবিষ্কারটি মঙ্গলের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস এবং জীবনের সম্ভাবনা সম্পর্কে চলমান বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
তবে, বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন যে এই খনিজগুলির গঠন সম্পূর্ণরূপে অজৈব ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার ফলও হতে পারে। তাই, এই নমুনার চূড়ান্ত বিশ্লেষণ পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পরেই সম্ভব হবে, যা ২০৪০-এর দশকে প্রত্যাশিত। এই দীর্ঘ অপেক্ষার কারণ হলো মঙ্গল অভিযান এবং নমুনা বিশ্লেষণের সঙ্গে জড়িত বিশাল লজিস্টিক এবং প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ। এই আবিষ্কারটি মঙ্গলের অতীতে জীবনের অস্তিত্বের সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের অনুসন্ধিৎসা আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং ভবিষ্যতের অভিযানের জন্য নতুন পথ খুলে দিয়েছে।