আলাস্কার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অ্যালসেক হিমবাহের দ্রুত পশ্চাদপসরণের ফলে একটি নতুন দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। নাসা-র আর্থ অবজারভেটরি কর্তৃক প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে যে, প্রায় ৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই নতুন ভূখণ্ডটি পূর্বে বরফে আবৃত থাকলেও এখন অ্যালসেক হ্রদের জলে পরিবেষ্টিত। এই রূপান্তরটি মূলত ২০২৫ সালের ১৩ জুলাই থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে অ্যালসেক হিমবাহ গেটওয়ে নবের কাছে অবস্থিত ছিল, যা বর্তমানে প্রাউ নব থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, বরফ আরও পূর্বে সরে গেলেও প্রাউ নবকে আবৃত করে রেখেছিল। কিন্তু কয়েক দশক ধরে হিমবাহটির পশ্চাদপসরণ অব্যাহত থাকায়, প্রাউ নব ধীরে ধীরে বরফ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দেয়। এই ঘটনাটি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হিমবাহের গলনের একটি প্রত্যক্ষ উদাহরণ, যা এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতিকে দ্রুত পরিবর্তন করছে।
নাসার আর্থ অবজারভেটরি সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব আলাস্কার উপকূলীয় সমভূমিতে বরফের পরিবর্তে দ্রুত জল স্থানান্তরিত হচ্ছে। এই অঞ্চলের হিমবাহগুলি পাতলা হচ্ছে এবং পশ্চাদপসরণ করছে, যার ফলে তাদের সামনে বরফ-গলিত হ্রদ তৈরি হচ্ছে। এই নতুন দ্বীপটি এমনই একটি ক্রমবর্ধমান জলরাশিতে আবির্ভূত হয়েছে। গ্লেসিওলজিস্ট মরি পেল্টো এবং অস্টিন পোস্ট পূর্বে অ্যালসেক হিমবাহের পশ্চাদপসরণের হার বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে প্রাউ নব প্রায় ২০২০ সালের মধ্যে একটি দ্বীপে পরিণত হবে। যদিও এটি তাদের পূর্বাভাসের চেয়ে পাঁচ বছর পরে ঘটেছে, তবে এই ঘটনাটি তাদের পর্যবেক্ষণের সত্যতা প্রমাণ করেছে।
পেল্টো, যিনি ১৯৮৪ সালে প্রথম অ্যালসেক হিমবাহ দেখেছিলেন, তিনি উল্লেখ করেছেন যে গত চার দশকে অ্যালসেক হ্রদের আকার প্রায় ৪৫ বর্গ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ৭৫ বর্গ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। এটি এই অঞ্চলের হিমবাহ পশ্চাদপসরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এই নতুন দ্বীপের সৃষ্টি কেবল একটি ভৌগোলিক পরিবর্তনই নয়, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বৃহত্তর প্রভাবের একটি প্রতীকও। বিশ্বজুড়ে হিমবাহগুলির পশ্চাদপসরণ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, জলের অভাব এবং জীববৈচিত্র্যের উপর প্রভাব ফেলছে। আলাস্কার এই ঘটনাটি এই বৈশ্বিক পরিবর্তনের একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে, যা আমাদের পরিবেশের প্রতি আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেয়।