কুয়েত সরকার কর্তৃক ইলেকট্রনিক ভিসা ব্যবস্থা চালু এবং প্রবেশ প্রয়োজনীয়তা শিথিলকরণ

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

কুয়েত সরকার ২০২৫ সালের জুলাই মাস থেকে একটি যুগান্তকারী ইলেকট্রনিক ভিসা (ই-ভিসা) ব্যবস্থা চালু করেছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য দেশটির প্রবেশ প্রক্রিয়াকে সহজতর করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই উদ্যোগটি কুয়েতের 'ভিশন ২০৩৫' কর্মসূচির অংশ, যার মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারি পরিষেবাগুলির আধুনিকীকরণ, অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ এবং আন্তর্জাতিক পর্যটন বৃদ্ধি করা। এই নতুন ব্যবস্থাটি ভ্রমণকারীদের জন্য কুয়েতকে আরও সহজলভ্য এবং আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরবে, যা দেশটির দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক রূপান্তরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

নতুন ই-ভিসা ব্যবস্থার অধীনে, পর্যটকদের জন্য চারটি প্রধান ক্যাটাগরির ভিসা উপলব্ধ রয়েছে: পর্যটন ভিসা, যা ৯০ দিন পর্যন্ত থাকার অনুমতি দেয়; পারিবারিক ভিসা, যা কুয়েতে বসবাসকারী আত্মীয়দের সাথে দেখা করার জন্য ৩০ দিনের জন্য বৈধ; ব্যবসায়িক ভিসা, যা ৩০ দিনের জন্য পেশাদারদের মিটিং, সম্মেলন বা বাণিজ্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য প্রযোজ্য; এবং সরকারি ভিসা, যা কূটনৈতিক বা প্রতিনিধিদলের জন্য ৩০ দিনের মেয়াদ সহ প্রদান করা হয়। আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক, যেখানে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ই-ভিসা পোর্টালে গিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করা, প্রয়োজনীয় নথি (যেমন পাসপোর্ট স্ক্যান, ছবি) আপলোড করা এবং অনলাইনে ফি পরিশোধ করা যায়। অনুমোদিত ই-ভিসা ইমেলের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়, যা সাধারণত ১ থেকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে পাওয়া যায়, ফলে দূতাবাস পরিদর্শনের প্রয়োজন হয় না এবং প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দ্রুত ও সুবিধাজনক হয়। এই ই-ভিসা ব্যবস্থার সুবিধাভোগী হিসেবে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, স্পেন, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ মোট ৫৩টি দেশের নাগরিকরা অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও, উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (GCC) দেশগুলির নাগরিকরা ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার উপভোগ করেন।

প্রবেশ প্রয়োজনীয়তা শিথিল করার অংশ হিসেবে, কুয়েত সরকার ২০২৫ সালের আগস্ট মাস থেকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ভিজিট ভিসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির প্রয়োজনীয়তা বাতিল করা এবং সর্বোচ্চ থাকার মেয়াদ এক বছর পর্যন্ত বাড়ানো। এই সংস্কারগুলি কুয়েতে আরও বিস্তৃত পরিসরের দর্শকদের আকৃষ্ট করতে এবং দেশের পর্যটন ও অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। বিশেষত, উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (GCC) দেশগুলিতে বসবাসকারী প্রায় ২৫ মিলিয়ন প্রবাসী নাগরিকের জন্য একটি বড় স্বস্তি এসেছে। এখন থেকে, বৈধ GCC রেসিডেন্সি (কমপক্ষে ছয় মাস মেয়াদী) সহ যেকোনো বিদেশী নাগরিক কুয়েতের সীমান্ত বা বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সরাসরি ট্যুরিস্ট ভিসা পেতে পারেন, যা পূর্বে নির্দিষ্ট কিছু পেশার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এছাড়াও, পূর্বে ভ্রমণকারীদের শুধুমাত্র জাতীয় ক্যারিয়ার ব্যবহার করার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তাও বাতিল করা হয়েছে, যা আকাশ, স্থল বা সমুদ্রপথে আগমনের ক্ষেত্রে আরও স্বাধীনতা প্রদান করে।

এই পদক্ষেপগুলি কুয়েতের ভিসা নীতিগুলির আধুনিকীকরণের প্রতি তাদের অঙ্গীকার প্রদর্শন করে এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য প্রবেশাধিকার উন্নত করে। 'ভিশন ২০ ৩৫' এর অধীনে এই সংস্কারগুলি দেশের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ লক্ষ্য পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তেল-নির্ভর অর্থনীতি থেকে সরে এসে কুয়েত একটি আঞ্চলিক ব্যবসা ও আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে, এবং পর্যটন খাত এই রূপান্তরের একটি প্রধান স্তম্ভ। এই সংস্কারগুলির মাধ্যমে পর্যটন রাজস্ব বৃদ্ধি, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির আশা করা হচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলি কুয়েতের পর্যটন খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং দেশের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান বাড়াতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সংস্কারগুলি জনসাধারণের দ্বারাও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে, যা কুয়েতের একটি উন্মুক্ত এবং স্বাগত জানানোর ভাবমূর্তি তৈরি করবে। সামগ্রিকভাবে, এই উদ্যোগগুলি কুয়েতকে একটি আধুনিক, প্রবেশযোগ্য এবং অর্থনৈতিকভাবে বৈচিত্র্যময় দেশ হিসেবে বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরবে।

উৎসসমূহ

  • Economy Middle East

  • NDTV

  • Connecting Travel

  • Travel And Tour World

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।