দীর্ঘ প্রতীক্ষিত গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। হামাসের হাতে আটক থাকা ইসরায়েলি নাগরিকদের প্রথম দলটিকে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) কাছে হস্তান্তর করা হয়, যা ছিল এই প্রক্রিয়ার মূল ঘটনা। তীব্র আলোচনার চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে এই মুহূর্তটি আসে, যা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে ভবিষ্যতের গতিপথ নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্দিদশায় থাকা মোট সাতজন ব্যক্তিকে গত সোমবার, ১৩ অক্টোবর মুক্তি দেওয়া হয়। মিশরের শারম এল-শেইখে পরোক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সম্মত হওয়া ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি চুক্তির এটি ছিল প্রথম পদক্ষেপ।
প্রথম দফায় মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন অ্যালন ওহেল, রোম ব্রাসলাভস্কি এবং জিভ ও গালি বারম্যান, যাদের মধ্যে জার্মান নাগরিকও ছিলেন। এই হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি গাজা শহরে সম্পন্ন হয়, এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি ছিটমহলের দক্ষিণেও অব্যাহত থাকার কথা ছিল। আইসিআরসি-এর কাছে হস্তান্তরের পর, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ/টিজেডএএইচএএল) তাদের গ্রহণ করে এবং রেইম সামরিক শিবিরে পরিবহনের ব্যবস্থা করে। সেখানে তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাতের আয়োজন করা হয়। যদি কোনো জিম্মির জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তবে তাদের হেলিকপ্টারে করে সরাসরি ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল, যেমন ইচিলভ বা শিবা-তে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখা হয়েছিল।
এই মানবিক পদক্ষেপটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে শুরু হওয়া একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার প্রথম ধাপের অংশ। এই পরিকল্পনার অধীনে, হামাসের হাতে আটক থাকা ৪৮ জন জিম্মির মধ্যে ২০ জনকে জীবিত মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে তেল আবিব প্রায় ২০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে তাদের কারাগার থেকে মুক্তি দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দির মুক্তি প্রত্যাশিত। হামাসের সামরিক শাখা এই চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলার অঙ্গীকার করেছে, তবে শর্ত দিয়েছে যে ইসরায়েলকেও অনুরূপভাবে তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে।
তবে, এই চুক্তির পরেও বেশ কিছু অমীমাংসিত দিক রয়ে গেছে। ইসরায়েলি পক্ষ মনে করছে না যে ৭২ ঘণ্টার এই স্বল্প সময়ের মধ্যে ২৮ জন নিহত জিম্মির মরদেহ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এটি পরিস্থিতির জটিলতাকেই তুলে ধরে। এছাড়াও, গাজার ভবিষ্যৎ শাসনভার এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে, যা ভবিষ্যতে গঠনমূলক আলোচনার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।
এই ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহায়তার জন্য তাদের প্রস্তুতি দেখাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতিতে সহায়তা করার জন্য ২০০ জন সামরিক কর্মীকে পাঠাচ্ছে। মিশর ১৩ অক্টোবর একটি 'শান্তি সম্মেলন'-এর ঘোষণা দিয়েছে, যেখানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মতো বিশ্বনেতারা অংশ নেবেন। এই যুদ্ধবিরতির মুহূর্তটি কেবল সংঘাতের একটি বিরতি নয়, বরং প্রক্রিয়াটির সাথে জড়িত সকলের জন্য বৃহত্তর চিত্রটি দেখার এবং একটি টেকসই ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য সম্মিলিত দায়িত্ব স্বীকার করার একটি সুযোগ। এটি সম্পর্ক পুনঃস্থাপন এবং সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার দিকে শক্তিকে চালিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়।