মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব সামাজিক সুরক্ষা ফোরাম (WSSF) ২০২৫-এ ভারত 'সামাজিক সুরক্ষায় অসামান্য কৃতিত্বের জন্য' আন্তর্জাতিক সামাজিক সুরক্ষা সমিতি (ISSA) পুরস্কার লাভ করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ডঃ মনসুখ মান্ডব্য ভারতের পক্ষ থেকে এই সম্মান গ্রহণ করেন। এই পুরস্কার প্রতি তিন বছর অন্তর প্রদান করা হয়। এই পুরস্কার ভারতের গত এক দশকে সামাজিক সুরক্ষা পরিধি সম্প্রসারণ এবং আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদান করা হয়েছে। এই সম্মান ভারতের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কারণ ভারত এই পুরস্কার প্রাপ্ত পঞ্চম দেশ। ২০১৫ সালে যেখানে মাত্র ১৯% নাগরিক সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের আওতায় ছিলেন, সেখানে ২০২৫ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪.৩%-এ, যা ৯৪০ মিলিয়নেরও বেশি নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই অভূতপূর্ব বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) দ্বারাও স্বীকৃত হয়েছে।
মন্ত্রী ডঃ মান্ডব্য এই কৃতিত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদৃষ্টি এবং 'অন্ত্যোদয়' নীতির প্রশংসা করেন, যা সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে ক্ষমতায়নের উপর জোর দেয়। ভারতের এই সামাজিক সুরক্ষা সম্প্রসারণের পেছনে ডিজিটাল পরিকাঠামোর এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে, ই-শ্রম পোর্টাল এই ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ২০২১ সালে চালু হওয়া এই পোর্টালটি অসংগঠিত খাতের শ্রমিকদের জন্য একটি জাতীয় ডাটাবেস তৈরি করেছে এবং এখন পর্যন্ত ৩১০ মিলিয়নেরও বেশি শ্রমিক এতে নথিভুক্ত হয়েছেন। এই পোর্টালটি শ্রমিকদের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প এবং সামাজিক সুরক্ষা সুবিধার সাথে সংযুক্ত করতে সহায়ক হয়েছে। এছাড়াও, ন্যাশনাল ক্যারিয়ার সার্ভিস (NCS) পোর্টাল দক্ষ যুবকদের নিয়োগকর্তাদের সাথে সংযুক্ত করছে এবং কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করছে।
এই পুরস্কার ভারতের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিশ্ব মঞ্চে দেশের অবস্থানকেও উন্নত করেছে। ভারত এখন ISSA জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে ৩০টি আসন সহ সর্বোচ্চ ভোট শেয়ার ধারণ করে, যা বিশ্বব্যাপী সামাজিক সুরক্ষা আলোচনায় দেশের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রতিফলন। ভারত সরকার নীতি, প্রক্রিয়া এবং ডিজিটাল সংস্কারের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, দক্ষতা বৃদ্ধি, আত্ম-কর্মসংস্থান এবং প্রযুক্তির সমন্বয়ে নতুন আয়ের সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি একটি শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা জাল প্রদান করা হচ্ছে। এই অর্জন প্রমাণ করে যে, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সার্বজনীন সামাজিক সুরক্ষার পথে ভারতের যাত্রা সঠিক দিকে এগোচ্ছে।