জানুয়ারি ২০২৫ সালে, আফ্রিকান ইউনিয়ন (AU) মহাদেশের কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থার ভবিষ্যৎকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। উগান্ডার কাম্পালায় অনুষ্ঠিত একটি বিশেষ সম্মেলনে নেতারা "কাম্পালা ঘোষণা" গ্রহণ করেছেন, যা ২০২৬ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত দশ বছরের জন্য একটি কৌশলগত কাঠামো। এই ঘোষণাটি কৃষিকে কেবল উৎপাদনের ক্ষেত্র হিসেবে না দেখে একটি সমন্বিত কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা (agrifood system) হিসেবে বিবেচনা করে, যা আফ্রিকার সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার পথে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
এই নতুন উদ্যোগটি আফ্রিকার কৃষি উন্নয়নের দীর্ঘ যাত্রার একটি ধারাবাহিক বিবর্তন। এর পূর্বে, ২০০৩ সালের 'মাপুটো ঘোষণা' কৃষিতে অন্তত ১০% বাজেট বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং 'কম্প্রিহেনসিভ আফ্রিকা এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম' (CAADP) এর ভিত্তি স্থাপন করেছিল। পরবর্তীতে, ২০১৫-২০২৫ সালের 'মালাবো ঘোষণা' কৃষির বৃদ্ধি, সমৃদ্ধি এবং উন্নত জীবনযাত্রার উপর জোর দিয়েছিল, যেখানে ২০২৫ সালের মধ্যে ক্ষুধা নির্মূল, দারিদ্র্য হ্রাস এবং আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে কৃষি পণ্যের বাণিজ্য তিনগুণ করার মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে, মালাবো ঘোষণার লক্ষ্যমাত্রাগুলি সম্পূর্ণরূপে অর্জিত হয়নি, যা মহাদেশকে নতুন কৌশল অবলম্বনে উৎসাহিত করেছে।
কাম্পালা ঘোষণা পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাগুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি হলেও, এটি একটি সামগ্রিক কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা পদ্ধতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে, যা উৎপাদন থেকে ভোগ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়কে অন্তর্ভুক্ত করে। এই ঘোষণাটি ছয়টি প্রধান স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে: উৎপাদন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা, অন্তর্ভুক্তি এবং শাসনব্যবস্থা। এর মাধ্যমে ২০৩৫ সালের মধ্যে খাদ্য ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য রূপান্তর সাধনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঘোষণার অন্যতম প্রধান লক্ষ্যগুলির মধ্যে রয়েছে ফসল কাটার পর অপচয় ৫০% হ্রাস করা, আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে কৃষি-খাদ্য পণ্যের বাণিজ্য তিনগুণ বৃদ্ধি করা এবং স্থানীয়ভাবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্যের পরিমাণ মোট কৃষি-খাদ্য জিডিপির ৩৫% এ উন্নীত করা। এছাড়াও, ২০৩৫ সালের মধ্যে কৃষি ফসলের ফলন ৪৫% বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও, ২০৩৫ সালের মধ্যে মহাদেশে কৃষি-খাদ্য খাতে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য, ২০২৬-২০৩৫ সালের জন্য নতুন CAADP কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
আফ্রিকার কৃষি খাতে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং উৎপাদন চ্যালেঞ্জগুলি প্রকট। উদাহরণস্বরূপ, নাইজেরিয়ায় জাতীয় বাজেটের মাত্র ৩% এর কম কৃষিতে বরাদ্দ করা হয়, যেখানে প্রায় ১৮% মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কেনিয়ার রাষ্ট্রপতি উইলিয়াম রুটো এই প্রসঙ্গে বলেছেন, "এমন আফ্রিকার স্বপ্ন যেখানে কোনো শিশু ক্ষুধার্ত থাকে না, যেখানে প্রতিটি সম্প্রদায় পুষ্টিকর খাদ্য পায় এবং যেখানে কৃষি লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য কর্মসংস্থান ও সম্পদ তৈরি করে, তা নাগালের মধ্যেই রয়েছে।"
এই রূপান্তরের জন্য নীতি নির্ধারণের পাশাপাশি কার্যকর বাস্তবায়ন, অংশীদারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং স্বচ্ছ জবাবদিহিতা অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি কেবল উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তন, পুষ্টির অভাব এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মতো জটিল বিষয়গুলিকেও সমাধান করবে। কাম্পালা ঘোষণা আফ্রিকার কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থার জন্য একটি নতুন আশার আলো, যা মহাদেশের নেতাদের সম্মিলিত ইচ্ছাশক্তি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ও সমৃদ্ধ আফ্রিকা গড়ার অঙ্গীকারের প্রতিফলন।