ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির পর সম্ভাব্য শান্তি মিশনের অংশ হিসেবে জার্মান সৈন্য মোতায়েনের সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছে জার্মানি। এই অবস্থান পূর্ববর্তী জার্মান সরকারের মনোভাব থেকে ভিন্ন, যারা নির্দিষ্ট শর্তে এই ধরনের মোতায়েনে আগ্রহী ছিল। বর্তমান সরকার ন্যাটো (NATO) অঞ্চলের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে এবং ইউক্রেনকে আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, মানবিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে চায়।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল বলেছেন যে ইউক্রেনে জার্মান সৈন্য মোতায়েন করা একটি অতিরিক্ত বোঝা হবে। তিনি ইউক্রেনের আত্মরক্ষার জন্য আধুনিক সরঞ্জাম ও আর্থিক সহায়তার উপর জার্মানির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। শান্তি আলোচনার বিষয়ে তিনি সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, তবে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং রাশিয়ার উপর অব্যাহত চাপ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্জও একই মনোভাব পোষণ করেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে ইউরোপের একটি ভূমিকা থাকলেও, ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে জার্মান সৈন্য মোতায়েনের কোনো সম্ভাবনা তিনি দেখতে পাচ্ছেন না এবং বিশ্বাস করেন যে যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি কার্যকর ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীই মূল চাবিকাঠি। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো সৈন্য মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনা করছে, যেখানে জার্মানি ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেছেন যে চুক্তি স্বাক্ষরের পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিদেশী সৈন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে, জার্মানিতে ডানপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (AfD)-এর উত্থান দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। AfD রাশিয়ার প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে এবং সংঘাত এড়াতে চায়। দলটি জার্মান সরকারের বর্তমান সতর্কতামূলক অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ইউক্রেনে সরাসরি সামরিক অংশগ্রহণের বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।
AfD-এর ক্রমবর্ধমান প্রভাব, যা ২০২৯ সালের মধ্যে জার্মানির প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে, তা বৈদেশিক নীতি এবং নিরাপত্তা অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় বিতর্কে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দলটি রাশিয়ার প্রতি তাদের এই অবস্থান বজায় রেখেছে, যা বর্তমান সরকারের সতর্কতার সাথে মিলে যায়। এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট জার্মানির ইউক্রেন নীতিকে আরও জটিল করে তুলেছে, যেখানে তারা একদিকে ন্যাটো মিত্রদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, অন্যদিকে রাশিয়ার সাথে সরাসরি সংঘাত এড়াতে সচেষ্ট।