লেবাননে UNIFIL মিশনের সমাপ্তি: আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব
সম্পাদনা করেছেন: Tatyana Hurynovich
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে ২০২৬ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে লেবাননে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী বাহিনী (UNIFIL) মিশন শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় মিত্রদের সাথে আলোচনার পর নেওয়া হয়েছে, যেখানে লেবাননের সশস্ত্র বাহিনী (LAF) দক্ষিণ লেবাননের নিরাপত্তার পূর্ণ দায়িত্ব নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপটি মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশেষ করে ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যেকার উত্তেজনার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত UNIFIL, ইসরায়েলি সৈন্যদের লেবানন থেকে প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করে আসছিল। ২০০৬ সালের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের পর এর কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধি পায়, যার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করা এবং লেবাননের বাহিনীকে সহায়তা করা। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের পক্ষ থেকে মিশনের কার্যকারিতা এবং ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়ায় এর সমাপ্তির দিকে জোর দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র আরও দ্রুত প্রত্যাহারের পক্ষে থাকলেও, ফ্রান্সের প্রস্তাবিত বিলম্বিত প্রস্থানের সাথে তারা একমত হয়।
এই মিশনের সমাপ্তির ফলে লেবাননের সশস্ত্র বাহিনী (LAF) দক্ষিণ লেবাননের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। লেবাননের কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে LAF-এর স্বাধীনভাবে নিরাপত্তা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং তহবিলের অভাব রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, সৌদি আরব এবং কাতারের মতো দেশগুলো হিজবুল্লাহ সদস্যদের নিরস্ত্রীকরণের সহায়তায় দক্ষিণ লেবাননে একটি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করা, যদিও হিজবুল্লাহ নেতৃত্ব এই নিরস্ত্রীকরণ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে।
UNIFIL-এর এই বিদায় লেবাননের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের দিকে একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হলেও, স্থানীয় নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সমর্থন এবং একটি স্পষ্ট উত্তেজনা প্রশমন কৌশল ছাড়া এটি বিদ্যমান নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই পরিবর্তনের ফলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর কী প্রভাব পড়বে এবং লেবাননের সশস্ত্র বাহিনী কতটা সফলভাবে নিরাপত্তা বজায় রাখতে পারবে, তা সময়ই বলে দেবে। এই মিশনের সমাপ্তি কেবল একটি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের শেষ নয়, বরং এটি লেবাননের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
উৎসসমূহ
Washington Examiner
Financial Times
Associated Press
Al Jazeera
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
