ইসরায়েল হামাসকে জিম্মিদের মুক্তি এবং নিরস্ত্রীকরণের মতো যুদ্ধবিরতির দাবি পূরণের জন্য চাপ দিচ্ছে। এই দাবি পূরণ না হলে গাজা সিটি সম্পূর্ণ ধ্বংসের হুমকি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা সিটিতে একটি বড় স্থল হামলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে গাজার মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনাও বেড়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সতর্ক করেছেন যে, হামাস যদি জিম্মিদের মুক্তি এবং সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের দাবি না মানে, তাহলে গাজা সিটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এই বিবৃতির পর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজা সিটি দখলের জন্য একটি বড় স্থল হামলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গাজায় পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে, যেখানে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে এবং সংঘাত তীব্রতর হয়েছে। সম্প্রতি একটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা সিটিতে একটি স্কুলে অন্তত ১৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অবিলম্বে হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির জন্য আলোচনার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, জিম্মিদের মুক্ত করা এবং হামাসকে ধ্বংস করার সবচেয়ে নিশ্চিত উপায় হলো গাজা সিটি দখল করা, যা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হতে পারে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালের হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬২,০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনায় এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে, যা মানবিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মনে করেন যে, গাজা সিটি দখল করা জিম্মিদের মুক্ত করা এবং হামাসকে ধ্বংস করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। অন্যদিকে, জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে, ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা সংঘাতের এক নতুন ভয়াবহ অধ্যায় শুরু করতে পারে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করতে পারে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (MSF) অভিযোগ করেছে যে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার জনগণকে জল থেকে বঞ্চিত করছে এবং এটিকে 'গণহত্যার প্রচারণা' হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা জরুরিভাবে জল সরবরাহ সরঞ্জাম এবং অবকাঠামো মেরামতের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও বিক্ষোভ চলছে, যেখানে জনগণ যুদ্ধবিরতি, গাজার যুদ্ধ শেষ করা এবং সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির দাবি জানাচ্ছে। আগস্ট ২০২৫-এ একটি দেশব্যাপী ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। তারা যুদ্ধ শেষ করার এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এই বিক্ষোভের মধ্যে, ইসরায়েলি পুলিশ জল কামান ব্যবহার করেছে এবং অনেক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।
জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, গাজা সিটিতে এবং এর আশেপাশে দুর্ভিক্ষ চলছে, যা সম্পূর্ণভাবে মানবসৃষ্ট। এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদি অবিলম্বে মানবিক সহায়তা না পৌঁছায়। এই দুর্ভিক্ষ খাদ্য, পানীয় জল এবং স্বাস্থ্যসেবার অভাবের কারণে সৃষ্টি হয়েছে, যা গাজার জনগণের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।