সুদানের চলমান সংঘাত নিরসনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং মিশর একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই চারটি দেশ ‘কোয়াড’ নামে পরিচিত এবং তারা সুদানের শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং একটি বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি রূপান্তরকালীন পর্যায়।
গত ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে চারটি দেশ তাদের যৌথ বিবৃতিতে জানায় যে, সুদানের সংঘাতের কোনো সামরিক সমাধান নেই এবং বর্তমান পরিস্থিতি অগ্রহণযোগ্য দুর্ভোগ ও আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। তাদের প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় তিন মাসের একটি মানবিক যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে, যা সুদানের সকল অংশে জরুরি ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ করে দেবে। এর পরেই একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এই যুদ্ধবিরতির পর, নয় মাসের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বচ্ছ রূপান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে, যার মাধ্যমে সুদানের জনগণ একটি স্বাধীন, বেসামরিক-নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
এই পরিকল্পনাটি সুদানের সেনাবাহিনী (SAF) এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF) উভয় পক্ষের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন দেশগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা। এর উদ্দেশ্য হলো এমন একটি পরিবর্তনে সহায়তা করা যা সুদানের জনগণের স্বাধীন, বেসামরিক-নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এই সংঘাতের ফলে ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষ চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে এবং ২০ মিলিয়ন মানুষের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি, প্রায় ১৩ মিলিয়ন শিশু বিদ্যালয়ের বাইরে রয়েছে, যা শিক্ষার উপর সংঘাতের গভীর প্রভাব নির্দেশ করে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্র জিব্রিল ইব্রাহিম, যিনি সুদানের অর্থমন্ত্রী এবং বারা ইবনে মালিক ব্রিগেড নামে একটি ইসলামপন্থী মিলিশিয়ার সাথে যুক্ত, তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো ইসলামপন্থী প্রভাব সীমিত করা এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা রোধ করা। কোয়াড দেশগুলো জেদ্দা প্রক্রিয়ার মতো বিদ্যমান মধ্যস্থতা প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে এবং তারা তাদের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এই পরিকল্পনাটি সুদানের জনগণের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, তবে এর সাফল্য নির্ভর করবে SAF এবং RSF-এর এই পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উপর।