যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে উগান্ডা, যার আওতায় দেশটি তৃতীয় দেশ থেকে বিতাড়িত অভিবাসীদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেবে। এই অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাবেন না এবং নিজ দেশে ফিরতেও অনিচ্ছুক। তবে, এই চুক্তির আওতায় অপরাধমূলক রেকর্ড থাকা ব্যক্তি বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের আশ্রয় দেওয়া হবে না। উগান্ডা আফ্রিকান বংশোদ্ভূত অভিবাসীদের অগ্রাধিকার দিতে আগ্রহী। এই চুক্তিটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন উগান্ডার অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে পূর্বে এমন তথ্যের সত্যতা অস্বীকার করা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশ থেকে পাঁচজন অভিবাসীকে উগান্ডায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
এই চুক্তিটি বিশ্বব্যাপী অভিবাসন এবং আশ্রয় সংক্রান্ত চলমান চ্যালেঞ্জগুলির উপর আলোকপাত করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি এবং উগান্ডার মতো দেশগুলির উপর সম্ভাব্য চাপের বিষয়টিও তুলে ধরে, যারা ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শরণার্থী আশ্রয় দিয়েছে এবং তহবিলের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট উগান্ডার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাস, বিশেষ করে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর আইন, রাজনৈতিক দমন, অবৈধ মৃত্যুদণ্ড এবং শিশু শ্রমের মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) সতর্ক করেছে যে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে উগান্ডার শরণার্থীদের জন্য জরুরি তহবিল শেষ হয়ে যেতে পারে, যা সাহায্য কার্যক্রমকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উগান্ডার বিদ্যমান শরণার্থী এবং নতুন আসা অভিবাসীদের ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। উগান্ডা প্রায় ১৯.৩ লক্ষ (১.৯৩ মিলিয়ন) শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, যা তাদের মহাদেশের বৃহত্তম শরণার্থী-আশ্রয়দানকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম করে তুলেছে। এই বিশাল সংখ্যক শরণার্থীর পাশাপাশি নতুন অভিবাসীদের গ্রহণ করার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে যখন জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) সতর্ক করেছে যে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে উগান্ডার শরণার্থীদের জন্য জরুরি তহবিল শেষ হয়ে যেতে পারে। এই তহবিলের ঘাটতি খাদ্য, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সেবার মতো অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবাগুলোকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। ইউএনএইচসিআর-এর হিসাব অনুযায়ী, একজন শরণার্থীর মাসিক মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রায় ১৬ মার্কিন ডলার প্রয়োজন, কিন্তু তহবিলের অভাবে তা মাত্র ৫ মার্কিন ডলারে নেমে আসতে পারে। এই পরিস্থিতি শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার বৃদ্ধি, যৌন সহিংসতার শিকার হওয়া মেয়েদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং আশ্রয়হীন পরিবারের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি, যা বিতাড়িত অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়ানোর উপর জোর দেয়, তা আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়েছে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো যুক্তি দেয় যে এই ধরনের চুক্তি আন্তর্জাতিক আশ্রয় ব্যবস্থাকে দুর্বল করতে পারে। যদিও উগান্ডা এই পদক্ষেপকে তার মানবিক প্রতিশ্রুতি পূরণের অংশ হিসেবে দেখছে, তবুও সীমিত সম্পদ এবং চলমান শরণার্থী সহায়তা কর্মসূচির চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে অতিরিক্ত বোঝা কীভাবে পরিচালনা করবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এই চুক্তিটি উগান্ডার মানবাধিকার রেকর্ড, বিশেষ করে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের প্রতি দেশটির কঠোর আইন এবং রাজনৈতিক দমন-পীড়নের প্রেক্ষাপটে একটি বিতর্কিত বিষয় হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্বেও এই ধরনের চুক্তি সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন দেশের সাথে আলোচনা করেছে, যা অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে তাদের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ।