দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এনআইএস) জানিয়েছে যে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের কন্যা কিম জু এই সম্প্রতি তার পিতার সাথে চীন সফরকালে উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রশ্নে তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছেন। আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এনআইএস এই মূল্যায়ন জানায়। তাদের মতে, এই সফরটি কিম জু এই-কে কেন্দ্র করে একটি উত্তরসূরি আখ্যান (succession narrative) সম্পন্ন করার প্রক্রিয়ার অংশ ছিল।
কিম জং উন তার কন্যাকে নিয়ে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেন, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছিল। এটি ছিল কিম জু এই-এর উত্তর কোরিয়ার বাইরে প্রথম জনসমক্ষে উপস্থিতি। যদিও তিনি জনসমক্ষে খুব বেশি আসেননি এবং বেইজিংয়ে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসে অবস্থান করেছেন বলে জানা গেছে, তবুও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে তার বাবার সাথে তার ছবি প্রকাশ করে উত্তর কোরিয়ার জনগণের কাছে তার ভাবমূর্তি তুলে ধরা হয়েছে, যা একজন সম্ভাব্য উত্তরসূরির জন্য প্রয়োজনীয়।
এনআইএস-এর মতে, এই সফরের মাধ্যমে কিম জু এই-এর উত্তরসূরি হওয়ার সম্ভাবনা আরও দৃঢ় হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাটি আরও জানিয়েছে যে, উত্তর কোরিয়া সরকার কিম জং উন এবং তার কন্যার বায়োমেট্রিক তথ্য গোপন রাখতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বিশেষ বিমানে বর্জ্য পরিবহন এবং দূতাবাসে অবস্থান। এই পদক্ষেপগুলো তাদের নেতৃত্বকে সুরক্ষিত রাখার একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, কিম জং উন তার কন্যাকে এমন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে নিয়ে আসার মাধ্যমে তাকে ভবিষ্যতের নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করছেন। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে তাকে 'শ্রদ্ধেয় কন্যা' হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, যা সাধারণত সর্বোচ্চ পদাধিকারীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই সফরটি উত্তর কোরিয়া ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ককেও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে, যেখানে কিম জং উন শি জিনপিংয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
কিম জু এই-এর বয়স এবং নাম সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা মনে করে যে তার জন্ম প্রায় ২০১৩ সালে, অর্থাৎ তার বয়স বর্তমানে ১২ বা ১৩ বছর। যদিও উত্তর কোরিয়ার পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এবং কনফুসীয় প্রভাবের কারণে একজন নারীর নেতৃত্ব গ্রহণ করা কঠিন হতে পারে, তবুও কিম জং উন তার কন্যাকে ভবিষ্যতের নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তা উত্তর কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।