জর্জিয়ার রাজধানী তিবিলিসিতে স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিক্ষোভের পর পাঁচজন বিরোধী নেতাকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে দেশটির প্রসিকিউটররা। গত ৬ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে এই অভিযোগ আনা হয়। এই ঘটনাটি জর্জিয়ার রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে এবং দেশটির গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
গত ৪ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলগুলো বয়কট করার পর তিবিলিসিতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাসীন জর্জিয়ান ড্রিম পার্টির নীতি এবং রাশিয়ার প্রতি তাদের কথিত পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। বিক্ষোভের সময় কিছু প্রতিবাদকারী রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে রায়ট পুলিশ জলকামান ও মরিচ স্প্রে ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এই ঘটনায় ১৪ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত পাঁচজন বিরোধী নেতা হলেন পাটা বুর্চুলজে, মুরতাজ জোডেলাভা, ইরাকলি নাদিরাজে, পাটা মানজগালাজে এবং লশা বেরিজ। তাদের প্রত্যেককে সর্বোচ্চ নয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। প্রসিকিউটরদের মতে, তারা রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব উৎখাতের আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং দলবদ্ধ সহিংসতা সংগঠিত করেছিলেন।
এই ঘটনাটি জর্জিয়ার রাজনৈতিক বিভেদকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বিরোধী দলগুলো জর্জিয়ান ড্রিম পার্টির বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদের অভিযোগ এনেছে এবং অভিযোগ করেছে যে দলটি দেশকে পশ্চিমা বিশ্বের পরিবর্তে রাশিয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে যে তারা দেশের পশ্চিমা-ভিত্তিক লক্ষ্য পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জর্জিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি গত এক বছর ধরে উত্তপ্ত। গত বছর অক্টোবর, ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি জয়লাভ করেছিল, কিন্তু বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচনকে জালিয়াতিপূর্ণ বলে দাবি করেছে। এর পর, গত নভেম্বর, ২০২৪ সালে জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যোগদানের আলোচনা স্থগিত করার ঘোষণা দেয়, যা দেশটির পশ্চিমা-ভিত্তিক আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।
এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার স্বার্থে জর্জিয়ার গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে বিলিডজিনা ইভানিশভিলি, যিনি জর্জিয়ান ড্রিম পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, তার উপর ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো জর্জিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং দেশটির ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এই ঘটনাপ্রবাহ জর্জিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নির্দেশ করছে। একদিকে যেমন দেশটির জনগণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চায়, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের নীতিগুলো রাশিয়া-ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই টানাপোড়েন দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে।