জাপানের এলডিপি নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে জল্পনা: নির্বাচনী ধাক্কা ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে দল

সম্পাদনা করেছেন: S Света

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া সাধারণ নির্বাচনে বড় ধরনের পরাজয় এবং দলের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের কারণে নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার কথা ভাবছে দলটি। প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার অবস্থান বর্তমানে সমালোচিত হচ্ছে, বিশেষ করে দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গত ২০শে জুলাই, ২০২৫-এর উচ্চকক্ষ নির্বাচনে এলডিপি এবং তাদের জোটসঙ্গী berkomito সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। এই পরাজয়ের পর, এলডিপির সুপ্রিম উপদেষ্টা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তারো আসো দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া দ্রুত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের আগে দলের পুনর্গঠন অত্যন্ত জরুরি। দলের সাধারণ সম্পাদক হিরোশি মোরিয়ামা, যিনি প্রধানমন্ত্রী ইশিবার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত, তিনি নির্বাচনী পরাজয়ের দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে, প্রধানমন্ত্রী ইশিবা তার পদত্যাগের খবর অস্বীকার করেছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য আলোচনা, বিশেষ করে জাপানি পণ্যের উপর শুল্ক হ্রাস সংক্রান্ত বিষয়ে নিজের দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার কথা জানিয়েছেন।

এই রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি জাপান এক গভীর অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন। আগামী অর্থবছরের জন্য রেকর্ড পরিমাণ বাজেট অনুরোধ (১২২.৪৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন বা ৮৩১.১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং মুদ্রাস্ফীতির মতো বিষয়গুলো অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। এছাড়াও, জাপানি ইয়েনের দুর্বলতা এবং জাপানি সরকারি বন্ডের উচ্চ ফলন বাজারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এলডিপির এই সংকট শুধুমাত্র নির্বাচনী পরাজয়ের ফল নয়, বরং এটি জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থার অভাব এবং অর্থনৈতিক নীতিগুলির প্রতি অসন্তোষেরও প্রতিফলন। বিশেষ করে, মূল্যবৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির মতো বিষয়গুলো জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

এই পরিস্থিতিতে, দলের অভ্যন্তরে নেতৃত্বের পরিবর্তন নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। আগামী ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এর মধ্যে এলডিপি নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে। এই ঘটনাপ্রবাহ জাপানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী ইশিবার নেতৃত্ব, দলের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং দেশের অর্থনৈতিক নীতিগুলি আগামী দিনে জাপানের পথচলা নির্ধারণ করবে। দলের মধ্যে বিভেদ এবং জনগণের অসন্তোষের মধ্যে, এলডিপি কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবং নিজেদের হারানো বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করে, তা সময়ই বলবে।

উৎসসমূহ

  • Bloomberg Business

  • Reuters

  • Reuters

  • Reuters

  • AP News

  • The Asahi Shimbun

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।