৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ – জার্মানির জুলিখ গবেষণা কেন্দ্রে ইউরোপের প্রথম এক্সাস্কেল সুপারকম্পিউটার JUPITER আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এবং নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার মন্ত্রী-প্রেসিডেন্ট হেনড্রিক উস্ট এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উদ্বোধন করেন। এই সুপারকম্পিউটারটি ইউরোপকে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং (HPC) ক্ষেত্রে বিশ্ব মঞ্চে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে এসেছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং জলবায়ু গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে যুগান্তকারী অগ্রগতি সাধনে সহায়ক হবে।
JUPITER প্রতি সেকেন্ডে এক কোয়াড্রিলিয়নের বেশি ফ্লোটিং-পয়েন্ট অপারেশন (FLOP) সম্পাদনে সক্ষম, যা এটিকে ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বিশ্বের চতুর্থ দ্রুততম সুপারকম্পিউটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর ক্ষমতা প্রায় ১০ মিলিয়ন সাধারণ ল্যাপটপের সম্মিলিত শক্তির সমান। এই বিশাল কম্পিউটিং শক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা জলবায়ু মডেলিং এবং চরম আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে আরও নির্ভুল করতে পারবেন। যেমন, প্রতি কিলোমিটারে আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদান করা সম্ভব হবে, যা তাপপ্রবাহ, প্রবল ঝড় এবং বন্যার মতো ঘটনাগুলির জন্য উন্নত প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে।
এই প্রকল্পটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জার্মানির যৌথ বিনিয়োগের ফল, যার মোট ব্যয় প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউরো। এটি ইউরো এইচপিসি (EuroHPC) উদ্যোগের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে, যা ইউরোপে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং পরিকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। JUPITER শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্যই নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নেও একটি প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে। এটি ভবিষ্যৎ এআই ফ্যাক্টরি (AI Factory) এবং বৃহৎ ভাষা মডেল (LLM) প্রশিক্ষণের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করবে, যা ইউরোপের ডিজিটাল সার্বভৌমত্বকে শক্তিশালী করবে।
প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের পাশাপাশি, JUPITER শক্তি-সাশ্রয়ী প্রযুক্তির উপরও জোর দিয়েছে। এটি প্রতি ওয়াটে ৬০ বিলিয়ন ফ্লোটিং-পয়েন্ট অপারেশনের দক্ষতা অর্জন করেছে এবং এর হট ওয়াটার কুলিং সিস্টেম পার্শ্ববর্তী জুলিখ ক্যাম্পাসে তাপ পুনঃব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি JUPITER-কে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তি-সাশ্রয়ী সুপারকম্পিউটারগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে, যা টেকসই প্রযুক্তির প্রতি ইউরোপের অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে।
জুলিখ সুপারকম্পিউটিং সেন্টারের (JSC) পরিচালক থমাস লিপার্ট বলেন, “JUPITER এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা ও উন্নয়নের চূড়ান্ত পর্যায়। এটি বিজ্ঞান ও শিল্পের জন্য সম্পূর্ণ নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।” এনভিডিয়ার (NVIDIA) সিইও জেনসেন হুয়াং বলেন, “JUPITER উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে একটি একক স্থাপত্যে একত্রিত করেছে। এটি পরবর্তী প্রজন্মের বৈজ্ঞানিক কম্পিউটিংয়ের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম, যা জলবায়ু এবং নবায়নযোগ্য শক্তি মডেলিং থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম গবেষণা, নতুন উপকরণ ডিজাইন এবং ডিজিটাল টুইন নির্মাণ পর্যন্ত সমস্ত ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অগ্রগতি ত্বরান্বিত করবে।”
এই সুপারকম্পিউটারের উদ্বোধন ইউরোপের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যা মহাদেশটিকে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় এগিয়ে নিয়ে যাবে।