ইউরোপীয় কমিশন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের প্রস্তাব করেছে, যার লক্ষ্য হলো মস্কোর উপর অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়ানো। এই নতুন পদক্ষেপে রাশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি নিষিদ্ধ করা এবং বিভিন্ন রাশিয়ান আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও নিষেধাজ্ঞা এড়াতে জড়িত সংস্থাগুলির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই প্যাকেজটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় একটি ধারাবাহিক পদক্ষেপের অংশ।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন জানিয়েছেন যে, রাশিয়া কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে। তিনি ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার সাম্প্রতিক ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার আকাশসীমায় রাশিয়ান ড্রোন অনুপ্রবেশের ঘটনা উল্লেখ করেন। এই পরিস্থিতিতে, ইইউ রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতিকে দুর্বল করার জন্য আরও কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
নতুন নিষেধাজ্ঞার মূল বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার এলএনজি আমদানি নিষিদ্ধ করা, যা পূর্বে পরিকল্পিত সময়ের এক বছর আগেই, অর্থাৎ ১ জানুয়ারী, ২০২৭ থেকে কার্যকর হবে। এটি রাশিয়ার জ্বালানি খাত থেকে আয় কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এছাড়াও, রাশিয়ার প্রধান জ্বালানি সংস্থা রোসনেফ্ট এবং গ্যাজপ্রম নেফটের উপর সম্পূর্ণ লেনদেন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার "শ্যাডো ফ্লিট"-এর ১১৮টি অতিরিক্ত জাহাজকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে, যা মোট ৫৬০টিরও বেশি জাহাজের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
আর্থিক খাতের উপরও নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো, ইইউ ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম এবং লেনদেনের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রাশিয়ার অভ্যন্তরের এবং তৃতীয় দেশগুলির কিছু ব্যাংক, সেইসাথে বিকল্প রাশিয়ান পেমেন্ট সিস্টেমের সাথে যুক্ত বিদেশী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকেও নতুন লেনদেন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য রাশিয়ার প্রচেষ্টা মোকাবেলায় ইইউ-এর দৃঢ় সংকল্প প্রদর্শন করে।
এই নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজটি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও সামরিক শিল্পের সাথে জড়িত সংস্থাগুলিকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। যেসব কোম্পানি রাশিয়ার সামরিক শিল্পকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন করছে, তাদের উপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে চীন এবং ভারতের মতো দেশগুলির শোধনাগার, তেল ব্যবসায়ী এবং পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানিগুলি যারা নিষেধাজ্ঞার অধীনে তেল ক্রয় করছে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে, ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতি তার শত্রুতা পূর্ণ নীতি অব্যাহত রেখেছে। তিনি এই পদক্ষেপগুলিকে উত্তেজনা বৃদ্ধির ইঙ্গিত হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এই ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজটি সদস্য রাষ্ট্রগুলির দ্বারা অনুমোদিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এই পদক্ষেপগুলি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জ্বালানি বাজার এবং বিশ্ব অর্থনীতির উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের লক্ষ্য হলো রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধ করা এবং ইউক্রেনের জন্য একটি ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।