ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (GUR) রাশিয়ার পার্ম ক্রাই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক শিল্প কেন্দ্রে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এই হামলাটি রাশিয়ার সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সকে দুর্বল করার এবং দেশটির যুদ্ধ করার ক্ষমতা হ্রাস করার বৃহত্তর কৌশলের অংশ।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর, ইউক্রেনীয় ড্রোনগুলি পার্ম ক্রাইয়ের মেটাফ্র্যাক্স কেমিক্যালস প্ল্যান্টে আঘাত হানে। এই প্ল্যান্টটি রাশিয়ার অন্যতম প্রধান রাসায়নিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং এটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেমন ইউরোট্রপিন, মিথানল, পেন্ট্রাইট এবং ইউরিয়া উৎপাদনে বিশেষ পারদর্শী। ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রমতে, হামলায় ইউরিয়া উৎপাদনের সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই প্ল্যান্টটি ইউক্রেন সীমান্ত থেকে প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার (প্রায় ৯৯৫ মাইল) দূরে অবস্থিত, যা ইউক্রেনীয় বাহিনীর দীর্ঘ পাল্লার হামলার সক্ষমতা প্রদর্শন করে। এর আগে, ২০২৪ সালের ১২ মে, ইউক্রেনীয় ড্রোনগুলি রাশিয়ার কালুগানেফতেপ্রোডাক্ট, নোভোলিপেটস্ক মেটালার্জিক্যাল কম্বাইন এবং ভলগোগ্রাদ তেল শোধনাগারের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কেন্দ্রগুলিতেও হামলা চালিয়েছিল।
পার্ম ক্রাই অঞ্চল রাশিয়ার রাসায়নিক শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই অঞ্চলে মিথানল, অ্যামোনিয়া, নাইট্রোজেন সার এবং অন্যান্য রাসায়নিক পণ্যের উৎপাদন হয়। মেটাফ্র্যাক্স কেমিক্যালস এই অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম জৈব রাসায়নিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং ২০২৩ সালে তারা একটি নতুন অ্যামোনিয়া-ইউরিয়া-মেলামাইন (AUM) উৎপাদন কেন্দ্র চালু করেছিল। এই কেন্দ্রটি তার প্রথম আট মাসে প্রায় ৩০০,০০০ টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করেছে বলে জানা গেছে।
এই ধরনের শিল্প কেন্দ্রগুলিতে হামলা ইউক্রেনের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যা রাশিয়ার উৎপাদন ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। এই হামলাগুলি ইউক্রেনের একটি সুপরিকল্পিত কৌশলের অংশ যা রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হচ্ছে। ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলাগুলি রাশিয়ার তেল শোধনাগারগুলিতেও প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে দেশজুড়ে জ্বালানি ঘাটতি এবং মূল্যবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। কিছু বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলাগুলি রাশিয়ার সামরিক সরবরাহ শৃঙ্খলকে ব্যাহত করছে এবং যুদ্ধের অর্থায়নের জন্য প্রয়োজনীয় রাজস্ব হ্রাস করছে।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা স্পষ্টভাবেই রাশিয়ার তেল ও গ্যাস খাতকে লক্ষ্যবস্তু করার কথা বলেছেন, কারণ এটি রাশিয়ার যুদ্ধাস্ত্র উৎপাদন এবং অন্যান্য সামরিক কার্যক্রমের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি। ইউক্রেন ধারাবাহিকভাবে রাশিয়ার জ্বালানি ও শিল্প অবকাঠামোতে হামলা চালিয়ে আসছে, যা তাদের ড্রোন হামলার পরিসীমা এবং নির্ভুলতা বৃদ্ধি পাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এই ধরনের হামলা কেবল রাশিয়ার সামরিক ক্ষমতাকেই দুর্বল করে না, বরং দেশটির অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও চাপ সৃষ্টি করে, যা যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।