ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থমন্ত্রীরা ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। এই আলোচনার মূল বিষয় হলো ইউক্রেনের চলমান সংকট মোকাবিলায় রাশিয়ার হিমায়িত সম্পদ ব্যবহার করে আর্থিক সহায়তা প্রদান। এই প্রস্তাবটি ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং দায়িত্ববোধের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
জার্মানির অর্থমন্ত্রী লার্স ক্লিঙ্সবেইল এই প্রস্তাবের প্রতিটি দিক সতর্কতার সাথে খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন এবং জার্মানি এই প্রক্রিয়ায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে, স্পেনের অর্থনীতি মন্ত্রী কার্লোস কুয়ের্পো এই উদ্যোগকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেছেন এবং রাশিয়ান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প উৎস থেকে শক্তি সংগ্রহের ক্ষেত্রে স্পেনের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেছেন।
ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী সের্গেই মারচেঙ্কো দেশটির আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার অপরিহার্যতার কথা তুলে ধরেছেন। আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইউক্রেন যে ১৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বাহ্যিক অর্থায়ন পেয়েছে, তা দেশটির টিকে থাকার লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের গভীরতা প্রমাণ করে।
ইউরোপীয় কমিশন হিমায়িত রাশিয়ান সম্পদ থেকে উদ্ভূত অতিরিক্ত মুনাফা ইউক্রেনের সহায়তায় ব্যবহারের জন্য একটি "ক্ষতিপূরণ ঋণ" (reparation loan) প্রদানের মতো সৃজনশীল পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে। এই পদ্ধতিটি কেবল ইউক্রেনকে তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে না, বরং এটি রাশিয়ার আগ্রাসনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একটি প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবেও কাজ করবে। প্রায় ২১০ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ ইউরোপীয় ইউনিয়নে হিমায়িত অবস্থায় রয়েছে, যা এই আলোচনাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে, ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের মধ্যে আরও বেশি সংহতি এবং স্বনির্ভরতার দিকে মনোনিবেশ করছে। কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি কেবল একটি আর্থিক পরিকল্পনার আলোচনা নয়, বরং এটি একটি সম্মিলিত ইচ্ছাশক্তির প্রকাশ, যার মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নতুন এবং উদ্ভাবনী উপায় খুঁজছে।