রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের সাথে একটি সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির জন্য কিছু শর্তাবলী নির্ধারণ করেছেন। এই শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইউক্রেনকে দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে। পুতিন সামরিক অভিযান স্থগিত করতে এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলে আক্রমণ বন্ধ করতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। পূর্বে ক্রেমলিন এই অঞ্চলগুলির প্রশাসনিক সীমানা হস্তান্তরের উপর জোর দিয়েছিল, যদিও রাশিয়ান সেনাবাহিনী এর অর্ধেকেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করত। যুদ্ধবিরতির জন্য পুতিনের এই প্রস্তাবগুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নির্দেশ করে, বিশেষ করে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে একটি সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির আলোচনা চলছে। এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইউক্রেনের ভূখণ্ড, বিশেষ করে ক্রিমিয়া এবং ডনবাস অঞ্চল। ব্লুমবার্গ-এর প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন এবং তার ইউরোপীয় মিত্রদের এই চুক্তিতে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে, যা একটি অনিশ্চিত বিষয়। পুতিনের দাবি অনুযায়ী, ইউক্রেনকে ডনবাসের পূর্বাঞ্চল এবং ২০১৪ সালে রাশিয়ার অবৈধভাবে সংযুক্ত ক্রিমিয়ার উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে। এর অর্থ হলো, ইউক্রেনকে লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ক অঞ্চলের কিছু অংশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে, যা রাশিয়া সামরিকভাবে অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ভূখণ্ড হস্তান্তরের বিনিময়ে রাশিয়া খেরসন এবং জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে তাদের আক্রমণ স্থগিত করবে বলে জানা গেছে। তবে, এই চুক্তির বিস্তারিত এখনও চূড়ান্ত হয়নি এবং পরিবর্তন হতে পারে। জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ইউক্রেনকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে কিনা তাও অস্পষ্ট। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যুদ্ধের আগে ইউক্রেনের প্রায় ২০% বিদ্যুৎ উৎপাদন করত।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিসইনফরমেশন-এর প্রধান আন্দ্রি কোভালেঙ্কো গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই ধরনের "পরিকল্পনা" এবং "চুক্তি" সম্পর্কিত তথ্যকে "কাল্পনিক" বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে কোনো গণমাধ্যমের কাছে এই ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেই এবং প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে পুতিনের একটি সম্ভাব্য ত্রিমুখী বৈঠকের প্রস্তাবও আলোচিত হচ্ছে। তবে, পুতিন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে সরাসরি বৈঠকে আগ্রহী কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। অনেক মার্কিন কর্মকর্তা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে পুতিন সত্যিই যুদ্ধ শেষ করতে আগ্রহী কিনা, যদি না তা তার প্রাথমিক লক্ষ্যগুলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। ঐতিহাসিকভাবে, ক্রিমিয়া ১৭৮৩ সালে রাশিয়ান সাম্রাজ্যের অধীনে আসে এবং ২০১৪ সালে রাশিয়া এটি পুনরায় দখল করে। জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি এবং এটি যুদ্ধের আগে ইউক্রেনের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ২০% সরবরাহ করত। এই জটিল পরিস্থিতি ইউক্রেন যুদ্ধের একটি স্থায়ী সমাধানের পথকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।