আগামী ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে গিনি একটি নতুন সংবিধানের উপর গণভোট অনুষ্ঠিত করতে চলেছে। এই গণভোটটি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের অভ্যুত্থানের পর দেশটির রাজনৈতিক উত্তরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, এই প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে, কারণ তারা আশঙ্কা করছে যে এই সাংবিধানিক পরিবর্তনগুলি সামরিক শাসনের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে পারে।
সামরিক শাসক জেনারেল মামাদি দুম্বা (Mamady Doumbouya) ২০২৫ সালের ১লা এপ্রিল এই সাংবিধানিক গণভোটের ঘোষণা দেন। এর মূল উদ্দেশ্য হল সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথ সুগম করা। প্রস্তাবিত নতুন সংবিধানটি ২০২০ সালের সংবিধানকে প্রতিস্থাপন করবে এবং একটি গণতান্ত্রিক ও স্থিতিশীল শাসনব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত সংবিধানে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে সাত বছর করা, যা একবার নবায়নযোগ্য। এছাড়াও, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত কিছু সদস্য নিয়ে একটি সেনেট গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলি দেশের শাসন কাঠামোতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। পাশাপাশি, এটি বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়গুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে।
তবে, এই সাংবিধানিক পরিবর্তনের কিছু দিক নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, রাষ্ট্রপতির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং সেনেটের মতো নতুন প্রতিষ্ঠান গঠন দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পরিবর্তে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার একটি প্রচেষ্টা হতে পারে। তারা মনে করেন, এই প্রক্রিয়াটি সামরিক শাসনের মেয়াদ বাড়ানোর একটি কৌশল হতে পারে। অন্যদিকে, গিনির কর্তৃপক্ষ এই বর্ধিত মেয়াদকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বলে যুক্তি দিচ্ছে।
আঞ্চলিক গোষ্ঠী ইকোওয়াস (ECOWAS) একটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক উত্তরণের আহ্বান জানিয়েছে। তারা গিনির এই রাজনৈতিক যাত্রার উপর নিবিড় নজর রাখছে, কারণ এটি পশ্চিম আফ্রিকার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক শাসনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই গণভোট গিনির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এটি দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণ করবে এবং আঞ্চলিকভাবেও এর প্রভাব পড়বে। এই উত্তরণের সময়কালে স্বচ্ছতা, অন্তর্ভুক্তি এবং গণতান্ত্রিক নীতিগুলির প্রতি অঙ্গীকার বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এই গণভোটের ফলাফল গিনির গণতন্ত্রের পথে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে, তবে এর সাথে জড়িত উদ্বেগগুলিও উপেক্ষা করার মতো নয়।