মার্কিন আপিল আদালত: ট্রাম্পের বেশিরভাগ শুল্ক অবৈধ
সম্পাদনা করেছেন: Tatyana Hurynovich
ওয়াশিংটন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপিল আদালত ফর দ্য ফেডারেল সার্কিট সম্প্রতি এক ঐতিহাসিক রায়ে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত বেশিরভাগ শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করেছে। ৭-৪ ভোটে আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (IEEPA) অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের কোনো ক্ষমতা নেই। এই রায়টি পূর্বের একটি সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত হয়েছিল। এই ঘটনাটি বাণিজ্য নীতি নির্ধারণে নির্বাহী শাখার ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
এই বিতর্কের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো IEEPA আইনের ব্যাখ্যা। সাধারণত এই আইনটি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তা এবং বাণিজ্য ঘাটতির মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করে বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের জন্য এই আইনটি ব্যবহার করেছিল। তবে, আপিল আদালত মনে করে যে, এই আইনে স্পষ্টভাবে শুল্ক বা করের উল্লেখ নেই। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, কর ও শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে ন্যস্ত, এবং এই ক্ষমতা কংগ্রেসের কাছ থেকে নির্বাহী শাখায় হস্তান্তরের জন্য সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট আইন থাকা প্রয়োজন, যা IEEPA-তে অনুপস্থিত।
আদালত আরও উল্লেখ করেছে যে, এই শুল্কগুলোর পরিধি ও প্রভাব ছিল অভূতপূর্ব, যা বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই রায়ের ফলে "reciprocal" শুল্ক এবং মাদক পাচার সংক্রান্ত শুল্কসহ বেশ কিছু নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আরোপিত শুল্ক প্রভাবিত হবে। তবে, এটি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর আরোপিত শুল্কের মতো অন্যান্য আইনের অধীনে আরোপিত শুল্ককে বাতিল করে না। যদিও এই রায় ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা, তবে আগামী ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ পর্যন্ত এই শুল্কগুলো কার্যকর থাকবে। এই সময়সীমা প্রশাসনকে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সুযোগ দেবে।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই রায়কে "অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট" বলে সমালোচনা করেছেন এবং তিনি আত্মবিশ্বাসী যে সুপ্রিম কোর্ট এই সিদ্ধান্ত বাতিল করবে। তিনি সতর্ক করেছেন যে, শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে তা "দেশের জন্য একটি সম্পূর্ণ বিপর্যয়" ডেকে আনবে। এই আইনি চ্যালেঞ্জগুলো মূলত ছোট মার্কিন ব্যবসা এবং ১২টি ডেমোক্র্যাটিক-শাসিত রাজ্য কর্তৃক দায়ের করা হয়েছিল। তারা যুক্তি দিয়েছিল যে, IEEPA প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয় না এবং সাংবিধানিকভাবে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কংগ্রেসেরই। এই গোষ্ঠীগুলোর মতে, এই রায় অবৈধ শুল্কের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও ক্ষতি থেকে আমেরিকান ব্যবসা ও ভোক্তাদের রক্ষা করবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত সংগৃহীত প্রায় ১৫৯ বিলিয়ন ডলার শুল্ক ফেরত দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা একটি বিশাল আর্থিক প্রভাব ফেলতে পারে। এই বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক নীতি সংক্রান্ত নির্বাহী ও আইনসভা শাখার ক্ষমতার ভারসাম্যের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক তুলে ধরেছে। সুপ্রিম কোর্টে সম্ভাব্য আপিলের ফলাফল শুল্ক আরোপ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের ভবিষ্যৎ ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই ধরনের শুল্কের বৃহত্তর অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়েও বিতর্ক রয়েছে, যেখানে ব্যবসা ও ভোক্তাদের উপর বর্ধিত খরচ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের উপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
উৎসসমূহ
Reuters
Reuters
Associated Press
Financial Times
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
এফ-৩৫ চুক্তি এবং ১ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবকে MNNA মর্যাদা দিল যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ব্রাজিলের বেলেমে অনুষ্ঠিতব্য COP30 জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেবেন না বলে হোয়াইট হাউসের ঘোষণা
জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী: সানায়ে তাকাইচির নতুন সরকার এবং পরিবর্তনের হাওয়া
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
