বুর্কিনা ফাসোর সংসদ সর্বসম্মতভাবে একটি আইন পাশ করেছে যা সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করবে এবং এর জন্য কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রেখেছে। এই আইনটি কার্যকর হয়েছে ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে। নতুন আইন অনুযায়ী, সমকামী কার্যকলাপের জন্য দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে।
আইন মন্ত্রী এডাসো রড্রিগ বেয়ালা জানিয়েছেন যে, সমকামী আচরণকে "অদ্ভুত আচরণ" হিসেবে অভিহিত করে এই আইনটি ঐতিহ্যবাহী বিবাহ ও পারিবারিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখবে। সামরিক শাসনের অধীনে থাকা বুর্কিনা ফাসো এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সমকামিতা বিরোধী আইন প্রণয়নের ক্রমবর্ধমান ধারার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই আইনের অধীনে দোষী সাব্যস্ত বিদেশী নাগরিকদেরও বহিষ্কার করা হবে।
বুর্কিনা ফাসোর এই সিদ্ধান্তটি দেশের অভ্যন্তরীণ মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্য রক্ষার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা কিছু ক্ষেত্রে পশ্চিমা প্রভাবের বিরুদ্ধে একটি প্রতিক্রিয়া হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। দেশটির সামরিক শাসক ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ট্রাওরের শাসনের অধীনে এই আইনটি প্রণীত হয়েছে। ২০২২ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে ট্রাওরে নিজেকে পশ্চিমাপন্থী প্রভাব থেকে আফ্রিকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের একজন প্রবক্তা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
এই আইনটি আফ্রিকার অন্যান্য দেশ যেমন উগান্ডা, ঘানা এবং মালির মতো দেশগুলোর সমকামিতা বিরোধী কঠোর আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। উগান্ডা সম্প্রতি একটি কঠোর আইন পাশ করেছে যেখানে সমকামী কার্যকলাপের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। মালির মতো প্রতিবেশী দেশও সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে কারাদণ্ডের বিধান রেখেছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই আইনের সমালোচনা করেছে এবং এটিকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে এই ধরনের আইন এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও সহিংসতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে, বুর্কিনা ফাসোর সরকার এই আইনকে দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ রক্ষার একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
এই আইন প্রণয়নের ফলে বুর্কিনা ফাসোতে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের মানুষেরা নতুন আইনি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। এই আইনটি দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যা আফ্রিকার দেশগুলোতে এলজিবিটিকিউ+ অধিকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।